পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বকেয়া বিলের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই বিল বকেয়া রাখছে। কোম্পানি সূত্র বলছে, বকেয়া বিল বাড়তে বাড়তে প্রায় সাড়ে ছয় মাসের সমপরিমাণ হয়েছে। নিয়মিত বিল আদায়ের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কঠোর হতে গেলে প্রভাবশালীরা চাপ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। কিছু গ্রাহক সরকারি, আধা সরকারি, পিডিবি সারকারখানা, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি)-সহ প্রাইভেট পাওয়ার প্ল্যান্ট, শিল্প, ক্যাপটিভ, সিএনজি, বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহকরা নিয়মিতভাবে গ্যাস বিল পরিশোধ না করায় বকেয়ার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই বকেয়া জমা হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ৩৭৮ কোটি ৯০ লাখ, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ৮৪০ কোটি ৯৯ লাখ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ৪৯৬ কোটি , বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ১২০ কোটি ৫৮ লাখ, সরকারি কলোনি ১২৮ কোটি ৯০ লাখ, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (উচ্চ আদালত থেকে বকেয়া বিল দেওয়ার বিষয়ে যেসব গ্রাহক আবেদন করে থাকে ) ৩২৪ কোটি ৫৩ লাখ এবং অন্যান্য ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বিভিন্ন খাতে পৃথকভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪ হাজার ৬১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া আবাসিকে। ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে এক হাজার ২৯৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, এরপর আছে বিদ্যুতে, এই খাতে এখন পর্যন্ত বকেয়া আছে ১ হাজার ২০৬ কোটি ২০ লাখ টাকা, এরপর শিল্পে ৮৬০ কোটি ২৬ লাখ, ক্যাপটিভ ৮০৮ কোটি ২১ লাখ, সিএনজিতে ২৯৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বাণ্যিজিকে ৯৭ কোটি ৫৯ লাখ, সার কারখানায় ৪৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাতে গ্যাস বিল বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা জানান, সামগ্রিকভাবে গ্যাস বিল আদায় ও ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা শহরে একটি মেট্রো ঢাকা রাজস্ব ডিভিশন, ২টি মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন, ৬টি মেট্রো ঢাকা বিপণন বিভাগ, ৬টি মেট্রো ঢাকা রাজস্ব বিভাগ ও ২৫টি রাজস্ব শাখা এবং ঢাকার বাইরে ৩টি আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ ও ১৮টি শাখার সমন্বয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক, ক্যাপটিভ ও সিএনজি ফিড গ্রাহকের বকেয়া বিল আদায়ের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণাসহ ব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপক পর্যায়ে ফোনালাপ করেন। যথাসময়ে বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে মর্মে নোটিশ প্রদান করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এক বছর অতিক্রম হলে গ্রাহকের জামানত সমন্বয় করা হয় এবং বিল পরিশোধ করা না হলে অর্থ মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে।
মেট্রো ঢাকা এলাকা ও আঞ্চলিক বিতরণ বিভাগে বিভিন্ন কোম্পানির গ্রাহকের অবৈধ গ্যাস ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং বকেয়া গ্যাস বিল আদায়করণ কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষে বিপণন বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগের সমন্বয়ে প্রতিটি বিভাগে ৬টি টিম এবং ৬টি বিভাগে ৩৬টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যৌথভাবে এলাকাভিত্তিক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
শেয়ারবার্তা / মিলন