পুঁজিবাজারে অস্বাভাবিক পতনের জন্য করোনাভাইরাসই দায়ী-এ কথা ঠিক নয়। কারণ এ অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পলিসি মেকারদের বাজারে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ এবং অর্থমন্ত্রীর বাজার ভালো করার আশ্বাস প্রদান সত্ত্বেও কোনো ধরনের আশ্বাসেই কাজ হচ্ছে না। এতেই বোঝা যায়, এখানে অদৃশ্য কোনো হাত রয়েছে, কারণ বাজারের এ অস্থিরতা তৈরি করার সাহস সাধারণ বিনিয়োগকারীর নেই। আসলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে কম মূল্যে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই কৌশল করেছেন। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের আল আমিন এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।
আল আমিন বলেন, আগের দিনের ধারাবাহিকতায় নতুন করে বড় ধসের কবলে পড়ল দেশের পুঁজিবাজার। করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত সপ্তাহে বড় ধরনের ধস নামে। ওইদিন ২৭৯ পয়েন্ট হারিয়ে চার হাজার আট পয়েন্টে নেমে আসে। পরের দুদিন বাজার ইতিবাচক ধারায় ছিল। আসলে করোনাভাইরাস বাজারের এ রকম অবস্থার জন্য দায়ী, এটি ঠিক নয়। কারণ এ অবস্থায় বিশ্বের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পলিসি মেকারদের বাজারে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ এবং অর্থমন্ত্রীর বাজার ভালো করার আশ্বাস প্রদান সত্ত্বেও কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এতে বোঝা যাচ্ছে অদৃশ্য কোনো হাত রয়েছে। কারণ বাজারের এ অস্থিরতা তৈরি করার সাহস সাধারণ বিনিয়োগকারীর নেই। আসলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজার থেকে কম মূল্যে শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার একটি কৌশল। আবার এখন যেসব কোম্পানি বুক বিল্ডিংয়ে বাজারে আসছে, এসব কোম্পানির প্রাইস প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করছে। তার মূল উদাহরণ হচ্ছে এসকোয়ার নিট। যখন কোম্পানিটি বাজারে আসে তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে মূল্য ছিল ৪০ টাকা। আর কাট অফ প্রাইজ ছিল ৪৫ টাকা। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৪৫ টাকা দরে শেয়ারটি কিনেছে। কথা হচ্ছে কী করে? এখন শেয়ারটির দর ২০ টাকায় নেমে আসে। এটি যারা মূল্যায়ন করেছে তারাই এটার জন্য দায়ী।
তিনি আরও বলেন, দেশের মেগা প্রকল্পে অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি। এর একটি মূল কারণ দুর্নীতি। বালিশ, কাঁথা থেকে শুরু করে সব জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে। আবার উন্নয়নের কাজে ব্যাংক থেকে এরই মধ্যে এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ধার করা হয়েছে। রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকই নেতিবাচক রয়েছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আর মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের সঙ্গে একটি সম্পর্ক রয়েছে। মানি মার্কেট এখন তারল্য সংকট রয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ছে।
ফজলুল বারী বলেন, বড় দরপতনে অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজার। আসলে আস্থা ও সুশাসনের অভাবে বাজারে আজ এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ সরকার বাজারে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বাজারে এখন নোংরা খেলা হচ্ছে। কারসাজি করে বাজারকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
শেয়ারবার্তা / ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০