বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোকে ৫ হাজার কোটি ডলার অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ।
একইসঙ্গে সংস্থাটি সর্তক করে বলেছে, বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে চলতি বছরের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের তুলনায় কম হবে।
চীনের বাইরে ভাইরাসটি বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে সহায়তার এ ঘোষণা এল। মহামারীর মোকাবেলায় জরুরি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।
৮৩০ কোটি ডলারের বিশাল বাজেট অনুমোদন দিয়েছে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ)। ক্রমবর্ধমান সংকট তুলে ধরে বুধবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে একটি বিল পাস করেন আইনপ্রণেতারা।
বৃহস্পতিবার বিলটি সিনেটে ওঠার কথা রয়েছে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে খুব সহজেই বিলটি পাস হবে বলে আশা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু নিজেদের দেশের জন্যই নয়, করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার অর্থায়নেরও ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডির সংক্রামক রোগবিষয়ক জরুরি রিজার্ভ তহবিল থেকে এ অর্থায়ন করা হবে। খবর রয়টার্স ও আলজাজিরার।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনার মোকাবেলায় এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য ৫ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয় আইএমএফ। তবে এটা দেয়া হবে ঋণ সুবিধা হিসেবে জরুরি তহবিল গঠনের লক্ষ্যে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো এ অর্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে সক্ষম হবে।’ এর বাইরে চলতি সপ্তাহেই দরিদ্রতম দেশগুলোর জন্য বিনা সুদে ১০ বছরের জন্য প্রায় ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য কম সুদে ৫ বছরের জন্য প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ সহজলভ্য থাকবে বলেও জানায় আইএমএফ।
করোনাযুদ্ধ মোকাবেলায় পাশে দাঁড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনও। নিজ দেশসহ বহির্বিশ্বকে সহায়তায় প্রথমে ২৫০ কোটি ডলারের তহবিল অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটির অল্প সময় আগে কংগ্রেসের বিশেষ এক বৈঠকে তহবিল বাড়িয়ে ৮৩০ কোটি ডলার করা হয়।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। বিলটি দ্রুতই সিনেটে তোলা হবে। সিনেটে পাস হলেই স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে ট্রাম্পের কাছে। এ জরুরি তহবিলের অর্থ যেসব খাতে খরচ করা হবে তা হচ্ছে- এক. জনস্বাস্থ্যের প্রতিক্রিয়া ও সুরক্ষার জন্য ২২০ কোটির মধ্যে ৯৫ কোটি স্টেট ও স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেয়া হবে।
দুই. হাসপাতাল এবং কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টারগুলোতে ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসপত্রের জন্য ১০০ কোটি ডলার খরচ করা হবে। তিন. ডায়াগনস্টিক, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন তৈরির জন্য খরচ করা হবে ৩০০ কোটি ডলার। চার. অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্য খাতে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার সাহায্য দেয়া হবে। পাঁচ. এছাড়াও মানবিক খাতে অর্থাৎ যাদের করোনা চিকিৎসার সামর্থ্য নেই এমন নাগরিকদের সহায়তায় খরচ করা হবে ৩০ কোটি ডলার।
বরাবরের মতোই দেশের সুরক্ষার পাশাপাশি মহামারীর ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের আরও বেশ কয়েকটি দেশের সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ঢাকায় এক বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অন্যান্য বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং ইউএসএআইডির কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী অংশীদারদের পরিচালিত প্রকল্পের জন্য এ তহবিল দিচ্ছে। সহায়তার জন্য ঘোষিত দেশগুলো হচ্ছে- আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাজিকিস্তান, ফিলিপাইন, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
শেয়ারবার্তা / মিলন