সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরেছিল পুঁজিবাজার। কিন্তু সেই আলো বেশি দিন স্থায়ী হলো না। মাঝখানে সামান্য বিরতি দিয়ে আবারও পতনের ধারায় ফিরে গেল পুঁজিবাজার। অধিকাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দর হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি কমছে সূচক। এর জের ধরে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের বাজার মূলধন ক্রমেই কমছে। এই নেতিবাচক প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসান। ফলে তাদের হতাশাও দিন দিন বাড়ছে।
সাম্প্রতিক বাজারচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, গত সাত কার্যদিবস বাজারে টানা পতন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে শেষ চার কার্যদিবস বড় ধরনের পতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। চার দিনই সূচকের পতন হয়েছে এক শতাংশের বেশি। কোনো কারণ ছাড়া এ ধরনের পতন স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়।
গত ছয় দিনের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা, দৈনিক গড়ে যার পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সাত কার্যদিবস আগে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের ইউনিট এবং শেয়ারের মোট বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এরপর টানা পতনে বেশিরভাগ শেয়ার ও ইউনিটের দর কমে যায়, যে কারণে গতকাল এসব শেয়ার ও ইউনিটের বাজার মূলধন তিন লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
এদিকে পতনের জের ধরে গত সাত দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৩৪৯ পয়েন্ট। প্রতিদিন গড়ে সূচকের পতন হয়েছে ৫০ পয়েন্ট। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ৭০ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশের বেশি কমে স্থির হয়েছে চার হাজার ৪০৯ পয়েন্টে। সাত কার্যদিবস আগে সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৭৫৮ পয়েন্টে। অন্যদিকে এ সময়ে লেনদেনও ৮০০ কোটি টাকা থেকে ৪০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা।
গত বছর জুড়ে বেশিরভাগ সময়ই নিম্নমুখী ছিল পুঁজিবাজার। চলতি বছরের শুরুতে তা আরও বড় হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেওয়া কিছু পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হয়। মূলত এর পর থেকেই কিছুদিন উত্থান ছিল বাজারে। কিন্তু গত সাত কার্যদিবস ধরে আবার লাগাতার পতন চলছে।
এদিকে উত্থানের ধারা থেকে ফের টানা পতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, ‘আমরা চাই বাজারের দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতা। হঠাৎ দু-চার দিন বাজার ভালো থাকল, আবার অস্বাভাবিক পতন নেমে এলো-এমন পুঁজিবাজার আমরা চাই না।’ তারা বলেন, ‘গত বছর বেশিরভাগ সময়ই ডিএসইতে লেনদেন ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে ঘুরপাক খায়। কালেভদ্রে দু-এক দিন লেনদেন এর চেয়ে বেশি হলেও তা স্থায়ী হয়নি, যা স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়।’
উল্লেখ্য, গত বছর নির্বাচনের পর বাজার কিছুটা চাঙা ছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এরপর আবারও পতনের ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার। কমে যায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকের পাশাপাশি বাজার মূলধনও আশঙ্কাজনকহারে কমে যায়। ফলে লেনদেনও তলানিতে নেমে যায়। সম্প্রতি বাজার একটু ভালো হলে তাদের আশার সঞ্চার হয়েছিল, কিন্তু চলমান পতনে তারা বিনিয়োগ নিয়ে আবার দোলাচলে পড়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘এই পতনের বিশেষ কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। তবে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা কিছুটা হলেও দায়ী। তারা যে কোনো কারণে প্যানিক হয়ে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেন, যেটা ঠিক নয়। বাজারের যে কোনো বৈরী পরিস্থিতিতে তাদের ধৈর্যধারণ করা উচিত। তবে আমাদের দেশে এ ধরণের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম।’
শেয়ারবার্তা / হামিদ