আগামী ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণে সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। তবে ব্যাংকে আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। এসএমইসহ সব ধরনের শিল্প, গাড়ি-বাড়ি, ব্যক্তিগতসহ সব ধরনের ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে।
এদিকে, ব্যাংকের মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে না দেয়ার পক্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসব প্রতিষ্ঠানে সুদহার কমাতে বলা হবে। অবশ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান সুদহার কমাতে শুরু করেছে। সুদহারসহ এ খাতের সার্বিক বিষয়ে আগামী ২ মার্চ অর্থমন্ত্রী এবং ৩ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নানা কারণে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে সুদহারের সীমা ঠিক করে দিলে এ খাতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। ফলে আপাতত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ পেলে তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সরকারের পরামর্শে ব্যাংকে ঋণের সুদহারে সীমা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ভালো অবস্থানে থাকা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। এর পরও তহবিল সংকট রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রতিষ্ঠানের তহবিলের বড় অংশই ব্যাংক থেকে আসত। তবে আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারায় পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগের পর অনেক ব্যাংক এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তহবিল দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের কাছে ঋণখেলাপি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) , ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। এর বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ রয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি মমিনুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খারাপ অবস্থার কারণে পুরো খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। এ জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান খুব খারাপ অবস্থায় পড়েছে, তাদের অবস্থার উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে তহবিল সহযোগিতা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করে আমানতকারীর আস্থা ফেরানো যায় কিনা, তা বলা হবে। তিনি জানান, সুদহার বিষয়ে এখনও তাদের কিছু বলা হয়নি। দেখা যাক, অর্থমন্ত্রী বা গভর্নর কিছু বলেন কিনা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নির্দেশনা না দিলেও অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদহার কমাতে শুরু করেছে। আইপিডিসি, আইডিএলসি, ডেল্টা, ব্র্যাকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ৭ শতাংশ সুদে আমানত নেওয়া শুরু করেছে, আগে যা ৯ শতাংশ ছিল। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই তারা সুদহার কমাচ্ছেন। কেননা, এখন ব্যাংক থেকে কেউ যদি ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পায়, এর চেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হয়তো এক শতাংশ বেশি সুদ নিলে গ্রাহক পাবে। এর চেয়ে বেশি হলে গ্রাহক আসবে না।
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি আরিফ খান বলেন, বাজারে আমানতের সুদহার কমলে ঋণে অবশ্যই কমবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্কুলার না হলেও ঋণের সুদ এমনিতেই কমবে। আমরা যদি ৭ শতাংশ সুদে আমানত পাই, ১১ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কোনো সমস্যা নেই। আবার ৪ শতাংশ সুদে আমানত পেলে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারব। তবে বর্তমানে মূল্যস্ম্ফীতি রয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশে। এখন এর চেয়ে যদি আমানতে কম সুদ দেওয়া হয়, তখন আবার মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইবে কিনা তাও দেখতে হবে।
ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৮ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল। এ নিয়ে ওই সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডিদের সঙ্গে গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তখন এসব প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দেয়, প্রাথমিকভাবে রপ্তানি, উৎপাদনশীল খাত ও নারী উদ্যোক্তাদের ঋণে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য সব ঋণেও সুদহার কমবে। যদিও এ ঘোষণার পর ব্যাংকগুলোর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও সুদহার বেড়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস