চলতি অর্থবছরের দুই প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) শেষে লোকসানে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৪টি প্রতিষ্ঠান। জুন ক্লোজিং কোম্পানির মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৮০টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত অনিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্যমতে, ডিসেম্বর শেষে ১৫৫টি কোম্পানি মুনাফায় রয়েছে। এর মধ্যে গত হিসাববছরের দুই প্রান্তিকের তুলনায় মুনাফা কমেছে ৯২টির। অন্যদিকে মুনাফা বেড়েছে ৫৪টির। বাকি ৩৪টি প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে।
চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৯ শেষে যে কোম্পানিগুলো লোকসান করেছে সেগুলো হচ্ছে জুট স্পিনার্স, এসিআই লিমিটেড, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, বিডি ল্যাম্পস, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, ইস্টার্ন কেবল্স, অলটেক্স, আরামিট সিমেন্ট, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, দুলামিয়া কটন, তসরিফা ইন্ডাষ্ট্রিজ, উসমানিয়া গ্লাস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, সাফকো স্পিনিং, এমআই সিমেন্ট, জাহিনটেক্স, মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপার, গোল্ডেনসন, জেমিনী সি ফুডস, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, ইমাম বাটন, বিচ হ্যাচারি, মেঘনা পেট, তাল্লু স্পিনিং, জাহিন স্পিনিং, এটলাস বাংলাদেশ, আরএন স্পিনিং, জিকিউ বলপেন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ও মেট্রো স্পিনিং।
এসব কোম্পানির মধ্যে শ্যামপুর সুগারের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৬ দশমিক শূন্য চার টাকা। আগের বছর (দুই প্রান্তিক মিলে) এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪৫ টাকা। পরের অবস্থানে রয়েছে জিলবাংলা সুগার। দুই প্রান্তিক শেষে এ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির প্রায় সমপরিমাণ লোকসান ছিল। একইভাবে পাট খাতের কোম্পানির জুটস স্পিনার্সের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২১ টাকা ২৫ পয়সা। কোম্পানিটি এ সময়ে গত বছরও লোকসানে ছিল। অন্যদিকে একই সময়ে বিডি ল্যাম্পসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে চার টাকা ২৩ পয়সা। যদি প্রতিষ্ঠানটির লোকসান আগের চেয়ে কমেছে। গত আর্থিক বছরের দুই প্রান্তিক মিলে লোকসান ছিল আট দশমিক শূন্য আট টাকা। বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেরই আগের চেয়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক সময় নিজেরা শেয়ার ক্রয় করার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করে ইপিএস কম দেখায়। তখন শেয়ারদর কমে গেলে নিজেরাই নামে-বেনামে শেয়ার ক্রয় করেন। পরে দর বাড়লে এসব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করেন। আবার লভ্যাংশ কম দেওয়ার জন্যও অনেক কোম্পানি ভুল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। তবে এর সংখ্যা কম। কিন্তু তারপরও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা কমা-বাড়ার বিষয়ে বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। কেউ মনে করেন কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদন দেখে বছরশেষে কী হবে, তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না। সেই জন্য এ প্রতিবেদন দেখে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া ঠিক না। পরের প্রান্তিকেই আবার কোম্পানি ঘুরেও দাঁড়াতে পারে। তাই অপেক্ষা করা উচিত। তবে যে কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে, এর বেশিরভাগের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাই এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা আগে ভাবার দরকার।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ একই প্রসঙ্গে বলেন, প্রতিটি কোম্পানির ব্যবসা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে থকে। তাই প্রান্তিক প্রতিবেদন দেখে সবসময় বছরশেষে কী হবে, তা বোঝার উপায় থাকে না। সেই জন্য এ প্রতিবেদন (প্রান্তিক) দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। এই পরিস্থিতি থেকে দর আরও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা ঠিক নয়। যে কোনো কারণেই আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন। এতে তাদের লোকসান আরও ভারী হয়।
শেয়ারবার্তা / আনিস