বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশের মেগা প্রকল্পের কাজে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্রেস ক্লাবে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে মিট দ্য প্রেসে তিনি তার এ আশার কথা জানান। বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিসিসিআইয়ের সভাপতি গাজী গোলাম মোর্তজা।
চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, চলমান পরিস্থিতে চীন-বাংলাদেশের বাণিজ্যে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়নি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনের সক্ষমতা রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এটির প্রভাব কমে আসছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। চীনসহ বিশ্ববাসীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিগগরিই মানবিকতার জয় হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে লি জিমিং বলেন, পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যেসব চীন নাগরিক কর্মরত রয়েছেন তার দশ ভাগের এক ভাগ এখন চীনে অবস্থান করছে। এটি খুবই কম, এক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজের তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
তৈরি পোশাক শিল্পের সিংহভাগ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। এছাড়া গত দুই মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কমে গেছে। এ অবস্থায় এটি (করোনাভাইরাস) দীর্ঘদিন থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কী হবে জানতে চাইলে লি জিমিং বলেন, চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। ওই প্রদেশে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল তৈরি হয় না। তাছাড়া করোনাভাইরাস মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়, পণ্যের মাধ্যমে নয়। তাই আশা করছি, সমস্যা হবে না।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, যদি কেউ করোনাভাইরাসকে ইস্যু করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য অন্য দেশে সরিয়ে নিতে চায়, তাহলে সেটি হবে ‘স্টুপিড’ সিদ্ধান্ত।
বন্ধুরাষ্ট্র চীনের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো রকম গুজব বা অতিরঞ্জিত তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন বিসিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মোর্তজা।
তিনি বলেন, ‘ভাইরাসে চীনের নাগরিক বেশি আক্রান্ত হলেও এটি শুধু একক সমস্যা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ফলে সমস্যাটি এখন বৈশ্বিক। তাই এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে পৃথিবীর সব দেশকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিসিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের প্রতি ইতিবাচক ও বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী বজায় রাখতে হবে। একইভাবে চীন থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যবেক্ষণকাল শেষে স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পরিবার ও সমাজের সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিসিসিসিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধাসহ চীন ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ১০৭ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ১৩৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। চীনের বাইরে সিঙ্গাপুরসহ আরও ২৭টি দেশ ও অঞ্চলে এ প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়েছে।
করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর গত ১ ফেব্রুয়ারি উহান থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরত আনা হয়। বর্তমানে তারা আশকোনার হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন অবস্থায় (কোয়ারেন্টাইন) রয়েছেন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের সেখানে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
হুবেই প্রদেশ থেকে ফিরতে আগ্রহী আরও ১৭১ বাংলাদেশি। এজন্য তারা আবেদন জানালেও তাদেরকে এখনই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সরকার।
শেয়ারবার্তা / মিলন