পুঁজিবাজারে বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মিলিম্যান। বীমা কোম্পানিগুলো তাদের আইপিও প্রসপেক্টাস কীভাবে প্রস্তুত করে জমা দেবে, সে বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করতে চায় তারা। এছাড়া বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশন, প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, পণ্যের উদ্ভাবন ও প্রচলন, মার্জার ও অ্যাকুইজিশন, কোম্পানির মূলধন ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ বৃদ্ধিতেও সহযোগিতা করতে চায় কোম্পানিটি। মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এ আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দেশে কর্মরত বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তারা (সিএফও) সেমিনারটিতে উপস্থিত ছিলেন। মিলিম্যানের পক্ষে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল অ্যান্ড কনসাল্টিং অ্যাকচুয়ারিং লাইফ সংকেত কাওয়াতকার, কনসাল্টিং অ্যাকচুয়ারিং লাইফ হীরক বসু, হেড অব মার্কেটিং (এশিয়া) ও সিঙ্গাপুর অফিসের প্রতিনিধি চার্লস কার্নেইরো।
একাডেমি অব লার্নিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বীমা খাতের অ্যাকচুয়ারিয়াল সংখ্যা খুবই কম। মিলিম্যান দেশের বীমা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে এগিয়ে এসেছে। মিলিম্যান বিশ্বের ২০ দেশে ৫৮টি অফিস স্থাপন করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা আয় করছে। বীমা খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটি স্কলারশিপের মাধ্যমে দেশে নতুন অ্যাকচুয়ারি দেবে।
একজন বীমা অ্যাকচুয়ারিয়াল হলেন এমন একজন পেশাদার, যিনি কোম্পানির পলিসি ও আয়-ব্যয় হিসাব-নিকাশ করে থাকেন। একজন অ্যাকচুয়ারিয়ালের মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশন, প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, আইপিওতে আসতে কী কী সহযোগিতা দেয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিলিম্যান।
এ বিষয়ে হীরক বসু বলেন, বাংলাদেশে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোয় অ্যাকচুয়ারিয়াল নেই বললেই চলে। এ দেশের বীমা কোম্পানিগুলো অন্য সব কোম্পানির থেকে আলাদা। তাই এসব কোম্পানির ঝুঁকিও বেশি থাকে। কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশন সেবা প্রয়োজন। এ কারণে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন নিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করবে মিলিম্যান।
উল্লেখ্য, বিদেশী অ্যাকচুয়ারিয়ালের মাধ্যমে নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই দেশের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরণ করেই অ্যাকচুয়ারিয়ালের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন করতে হয়। অ্যাকচুয়ারি কোম্পানির ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থা নিয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে মতামত তুলে ধরবেন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় অ্যাকচুয়ারিকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। এমনকি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা তলব করলে তাকে হাজিরও হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলভিত্তিক মিলিম্যান ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে ৫৯টি অফিস রয়েছে তাদের। চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে প্রতিষ্ঠানটি জীবন বীমা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ