নগদ প্রণোদনা ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও রফতানি আয় কমছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সপ্তম মাস জানুয়ারিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমকি ২১ শতাংশ কম।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় বড় খাতগুলোর রফতানি কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে পুরো রফতানি আয়ে। এছাড়া দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে পোশাকের চাহিদা কম, তাই অর্ডারও কম। এর সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। পাশাপাশি দেশের অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা রয়েছে। রফতানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।
ইপিবির তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে (জুলাই-জানুয়ারি) পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয় দুই হাজার ৬৩৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। সেই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্জিত এ হার ৫ দশমিক ২১ শতাংশ কম।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে গেল জানুয়ারিতে রফতানি আয় হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। তবে এ সময় লক্ষ্য ছিল ৪২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জানুয়ারিতে রফতানি আয় কমেছে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারিতে রফতানি করে আয় হয়েছিল ৩৬৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান ৮৩ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমা মানে এর প্রভাব পুরো রফতানি খাতে পড়েছে।
আলোচিত সময়ে কমেছে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়। অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ কম। একই সময়ে রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখন আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা, কিন্ত তা না হয়ে কমছে। কারণ বিশ্ব বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। ফলে আমাদের রফতানি অর্ডার কমে গেছে। এর মূল কারণ আমরা যে সব কটন দিয়ে পণ্য তৈরি করছি, এর চাহিদা এখন কমছে। পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি ও বেতন-ভাতা বাড়ানোর কারণে কম দামে অর্ডার নেয়ার সক্ষমতা আগের চেয়ে কমেছে।
তিনি আরও বলেন, রফতানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র আনতে হবে। একই সঙ্গে শুধু পোশাকের ওপর নির্ভরশীলতা না হয়ে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ শিল্প উদ্যোক্তা।
চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম হয়েছে। সাত মাসে কৃষিপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি কমেছে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ। ৭ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ সময় প্লাস্টিক খাতে রফতানি আয় হয়েছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলার, যার লক্ষ্য ছিল ৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
গত ৭ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে, অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। প্রথম ৭ মাসে চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে। অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬০ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। রফতানি এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি রফতানি আয় করে বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রফতানির টার্গেট সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
শেয়ারবার্তা / আনিস