ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দিকনির্দেশনায় পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, গত মাসে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য যে ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে রোববার অর্থমন্ত্রী ৫টি লাভজনক সরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। কোম্পানিগুলোকে তাদের সম্পদ পুনর্মুল্যায়নে ২ মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই কোম্পানিগুলো বাজারে এলে, বাজারে ভাল শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে। টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
রকিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আন্তরিক। তিনি দেশে উন্নয়নের যে গতি সঞ্চার করেছেন, সেটি ধরে রাখতে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে চান। ব্যাংক নয়, পুঁজিবাজারই যে শিল্পায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেটি তিনি অনুধাবন করেন। তাই পুঁজিবাজারের মাধ্যমে শিল্প খাতে অর্থের যোগান দিতে তিনি উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেগুলো চিহৃত করতে পেরেছেন। আর তার আলোকেই ৬ টি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রণালয়, বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে।
রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য আরও কিছু কাজ করা দরকার। এর একটি হচ্ছে- কোম্পানি আইন সংশোধন করে কোম্পানি বাই-ব্যাক পদ্ধতি চালু করা।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতি চালু হলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া শেয়ারের দাম কমে গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তার রিজার্ভ ও রিটেইন আর্নিংস ব্যবহার করে বাজার থেকে কিছু শেয়ার কিনে নেবে। তাতে একদিকে বিনিয়োগকারীদের ভয় কেটে যাবে, তারা বুঝতে পারবে তাদের পাশে কোম্পানি আছে। অন্যদিকে শেয়ার কমে যাওয়ার কারণে পরবর্থীতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় বাড়বে।
তিনি বলেন, বিশ্বে অনেক বড় বড় কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে নিজেদের শেয়ার বাই-ব্যাক করেছে।
ডিএইর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, সম্প্রতি বাজারের নাজুক পরিস্থিতিতে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের তিনজন পরিচালক বাজার থেকে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকটা আস্থা ফিরে আসে। স্কয়ারের ওই পরিচালকরা সাধুবাদ পাওয়ার মত কাজ করেছেন। কিন্তু কোম্পানি বাই-ব্যাক থাকলে তাদেরকে শেয়ার না কিনলেও চলতো। স্কয়ার ফার্মা নিজেই বাজার থেকে শেয়ার কিনে নিতে পারত। তাহলে হয়তো স্কয়ার ফার্মার শেয়ারের দাম এতটা কমতোই না।
তিনি উদ্যোক্তাদেরকে তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের শেয়ার কেনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম এখন ৭ টাকা/১০ টাকা। তাই ব্যাংকের ‘মালিকদের’ উচিত বাজার থেকে শেয়ার কিনে বাজারে সরবরাহ কমানো। তাতে শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
তিনি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদেরকে কথিত মালিক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘তারা (উদ্যাক্তারা) নিজেদেরকে ব্যাংকের মালিক দাবি করেন। ব্যাংকের অর্থে বিলাস করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাও শুধুই শেয়ারহোল্ডার। অন্যদের সঙ্গে পার্থক্য হচ্ছে, তারা বড় শেয়াপরহোল্ডার, আর অন্যরা ছোট শেয়ালহোল্ডার। এই বড় শেয়ারহোল্ডাররা এক সময় তাদের ব্যাংকের ১০ টাকা দামের শেয়ার ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এখন সেই শেয়ারের দাম নেমে এসেছে ৮ টাকায়। তাই তাদের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত।
রকিবুর রহমান বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে উচ্চ মূল্য নিয়ে আসা কোম্পানিগুলোর উদ্যক্তাদের প্রতিও বাজার থেকে শেয়ার কেনার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি অতি উচ্চ মূল্যে বাজারে এসেছে। এখন এসব শেয়ারের দাম অনেক কমে গেছে। সত্যিই যদি কোম্পানিগুলো ভাল ও তাদের উদ্যোক্তাদের প্রিয় হয়ে থাকে, তাহলে শেয়ারের এই দাম যে কোম্পানির মর্যাদাকে ক্ষুন্ণ করছে তা তাদের বুঝতে পারা উচিত। তাই তাদের উচিত বাজার থেকে বেশি করে শেয়ার কেনা।
তিনি কোম্পানি কর্তৃক শেয়ার বাই-ব্যাক করার বিধানের বিষয়ে বলেন, এই বিধান বলে ভালো কোম্পানি, বিনিয়োগকারী এবং বাজার লাভবান হবে। এই বিধান নিয়ে ভয় নেই। কারণ দুর্বল মৌলের কোম্পানি, যাদের তেমন রিজার্ভ নেই, রিটেইন আর্নিংস নেই তারা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে না। তাই বিষয়টির অপব্যাবহারের আশংকাও থাকবে না। কোম্পানি বাই-ব্যাক চালুর বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন বলে জানান।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল