বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় শক্তি এখন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। অর্থনীতির অন্যান্য সূচক নিম্নমুখী হলেও বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১ হাজার ১০৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সংখ্যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে প্রায় ৪ কোটি ডলার বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
যেকোনও বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। তবে, একক মাস হিসাবে ২০১৯ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বলেন, ‘আশা করি, আগামী মাসগুলোতেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘এই অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স ২ হাজার কোটে ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ১ হাজার ১০৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেওয়ায় এটি বাড়ছে। এটি এখন অর্থনীতিতে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি মনে করেন, ‘ভবিষ্যতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।’
তবে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসবে। ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ কমিয়েছে। এই কারণে ব্যাংকের টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে পাচার হতে পারে। এতে ডলারের ওপর চাপ পড়লে ব্যাংক ব্যবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে আসবে। কারণ, ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রবাসীরা পান সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা। অথচ হুন্ডিতে পাঠালে পান ৮৮ টাকা।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিশ্বব্যাপী মন্দা অর্থনীতির হাওয়ার মধ্যেও একমাত্র রেমিট্যান্সই আশার আলো ছড়াচ্ছে।’
২০১৯ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৬৮ কোটি ৭০ লাখ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে গত ডিসেম্বরে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকায় আমদানি ব্যয় মেটানো সহজ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রফতানি আয়ে বড় ধাক্কার পরও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পেছনে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামীতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তেই থাকবে।’
বাংলাশে ব্যাংকের তথ্য বলছে, রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছর। ওই অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এদিকে, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিম্নমুখী থাকলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর নিয়ে শুরু হয় ২০১৯-২০ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগস্টে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। অক্টোবরে আসে ১৬৪ কোটি ডলার। নভেম্বর মাসে আসে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তারা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে দেশে থাকা প্রবাসীদের আত্মীয়রা ব্যাংক থেকে ১০২ টাকা ওঠাতে পারছেন। বর্তমানে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস