বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর হলেও সুশাসন ও নৈতিকতার চর্চায় অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরের ধাপে যেতে হলে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনৈতিকতা চর্চা বন্ধ করার পাশাপাশি সুশাসনের সূচকগুলোতেও নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
রোববার ঢাকাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনমিক মডেলিং-সানেম’র আয়োজনে অর্থনীতিবিদদের পঞ্চম বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।
রোববার ও সোমবার ঢাকার দুই ভেন্যুতে এই সম্মেলন হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের সূচকে অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু সুশাসনের আন্তর্জাতিক সূচকগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে। তারপরেও সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি একটি বিস্ময়।
“তবে এর পরবর্তী ধাপ পেরোতে যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। প্রবৃদ্ধি এবং সুশাসনের মধ্যে যে আন্তঃসম্পর্ক সেটা রক্ষা করে কিভাবে এগোবে সেটা এখন ভাবতে হবে।”
দেশের ব্যবসায়ী ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে অনৈতিকতার ব্যাপক চর্চা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একদিকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে; অন্যদিকে সুশাসনের সূচক নিচে পড়ে আছে। বিশ্ব ব্যাংকের ইজি অব ডুয়িং বিজনেস সূচক বা ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতামূলক সূচকগুলোর দিকে তাকিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি কমাতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কারের কথা ভাবতে হবে।
“অনৈতিকতার চর্চাই বেশি। এর ফলে হাতে গোণা কিছু মানুষ সৎ থাকার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছে না পরিস্থিতির চাপের কারণে। নৈতিকতার দিকেও ভাবতে হবে। সেটা কেবল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, জমি দখল, আর্থিক খাতের দুর্নীতি, খাদ্য দূষণ, পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এসবের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। নৈতিকতা বাড়ানোর জন্য সামাজিক প্রচারাভিযান দরকার।”
সুশাসন ও নৈতিকতার চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি জনমিতিকে কাজে লাগাতে বাস্তবমুখী শিক্ষার পাঠক্রম চালুর ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।
“কৃষির বাইরে অর্থনীতিতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা হল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা, বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকদের রেমিট্যান্স এবং নারী শ্রমিকদের স্বল্প মজুরিতে উৎপাদিত তৈরি পোশাক। পরবর্তী ধাপে যেতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন আছে। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে স্কিল বাড়াতে হবে। নিম্ন প্রযুক্তি ও কম মজুরির উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে তো দারিদ্র্য দূর হবে না।”
ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, “জনমিতির সুফল কাজে লাগাতে হলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে হবে। তাদের দক্ষ করতে হলে শিক্ষার কারিকুলাম ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষার প্রসার হয়েছে, কিন্তু গুণগত মান বাড়েনি। এটা করতে না পারলে একদিকে জনমিতির সুবিধা কাজে লাগাতে পারব না অন্যদিকে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যেতে পারব না। আমরা জ্ঞানভিত্তিক যে অর্থনীতির কথা বলছি সেখানে যেতে পারব না।
আরেক অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তরুণ গবেষকদের বর্তমান সমস্যাগুলো বুঝে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপনের এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। যেসব বিষয় ও সূচক নিয়ে এখন অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করছেন এর বাইরে কিছু বাদ পড়ছে কিনা সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
“বর্তমানে শ্রমখাতের ৮৮ শতাংশ রয়েছে ইনফরমাল (অপ্রাতিষ্ঠানিক) খাতে। উন্নয়ন করতে হলে তাদেরকে ইনফরমাল থেকে ফরমাল শ্রমবাজারের দিকে নিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির ছাত্র ও শিক্ষকরা এখন নতুন নতুন অর্থনৈতিক ইস্যুর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য শুভ মুহূর্ত।”
‘উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সানেম সম্মেলন।
মহাখালী ব্র্যাক ইন সেন্টারে সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশনের পর সোমবার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন বসবে গুলশান স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে।
সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, শ্রমবাজার, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ে ৬৫ জন গবেষক তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করবেন। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালের ২৭ জন গবেষক অংশ নিয়েছেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস