প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা সরিয়েছেন ব্যাংকটির রাজশাহী শাখার ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলাম ওরফে ফয়সাল। প্রায় দু’ বছর ধরে আইপিএলের বিভিন্ন খেলার অনলাইন বাজিতে টাকাগুলো দিয়ে তিনি জুয়া খেলে আসছেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তার বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার সেলিম রেজা খান। গ্রেফতারের পর ওই মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
রিমান্ডে পুলিশকে ফয়সাল জানান, ভল্টটা ঠিক আমার ডেস্কের পাশেই ছিল। সেখানে সবসময় ১৫ কোটি টাকার ক্যাশ থাকতো। খাতা-কলমে টাকার হিসেবও আমিই রাখতাম। খেয়াল করলাম- কেউ ভল্টের টাকার ব্যাপারে আগ্রহ কিংবা খোঁজ রাখে না। সবার অগোচরে একদিন ভল্টের সামনের লাইন ঠিক রেখে পেছনের দিক থেকে দু’-বান্ডিল টাকা সরালাম। দেখলাম- সেটা কেউ টের পাইনি। এরপরে বিভিন্ন সময়ে সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো সরিয়েছি।
এর আগে ফয়সালকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে পুলিশ আসামি ফয়সালের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়সাল ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। দুপুরে ফয়সালকে আদালতে পাঠানোর পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসা এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানান নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
ওসি বলেন, গ্রেফতারের পর থানায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শামসুল ইসলাম ফয়সাল শুধু টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে বিস্তারিত জানতে তাকে আদালতের অনুমতি নিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানিয়েছেন ফয়সাল। তবে ব্যাংক থেকে টাকা সরানোর ক্ষেত্রে তার সঙ্গে অন্য কারও যোগসাজশ ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়সালের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ফয়সাল জানিয়েছেন- ২০১৮ সাল থেকে তিনি ব্যাংকের টাকা সরাতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি যে টাকাগুলো চুরি করেছেন তা দিয়ে বাড়ির উচ্চমূল্যের সরঞ্জাম, সাংসারিক তৈজসপত্র ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা-খাওয়ায় শেষ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে বিপিএল এবং ২০১৯ সালের এপ্রিলে আইপিএল শুরু হলে স্ত্রী ও স্বজনদের নামে করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে বাজি ধরা শুরু করেন। বিট৩৬৫-তে মূলত বাজি ধরতেন তিনি। পরে নগরীর বিভিন্ন স্থানেও ক্রিকেটকেন্দ্রিক জুয়ার আসরের খোঁজ পান তিনি। সেখানে ধারাবাহিকভাবে বাজি ধরে, কখনও জিতেছেন কখনও হেরেছেন। শেষ পর্যন্ত তার হাতে আর সেই টাকা থাকেনি।
তার কাছ থেকে নগরীর কোনো জুয়ার আসর বা জুয়াড়ি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে কিনা প্রশ্নে ওসি বলেন, তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো জুয়াড়ির তথ্য জানাতে পারেন নি। তার থেকে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তা খতিয়ে দেখে নগরীর জুয়ার আসরে জড়িত চক্রকে ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এদিকে, টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলমের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম রাজশাহীতে পৌঁছেছে। বুধবার দুপুর থেকে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম বলেন, এই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফয়সালের সঙ্গে আর কেউ আছে কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ভল্টে টাকা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তত দু’জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকার কথা। এক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়েছে কিনা, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল