পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৫১টির ব্যাংক ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এ ঋণ দেশের ব্যাংক খাত থেকে বিতরণ করা মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। ৩২টি কোম্পানি ঋণখেলাপি, যা মোটের ১০ শতাংশ। এর বাইরে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি বাজারের ১০টি কোম্পানি ঋণখেলাপি।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি আট হাজার ২৩৮ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের তালিকা প্রকাশ করেন। ওই তালিকা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২ কোম্পানির খেলাপি ঋণ এক হাজার ৭৯০ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বিশ্নেষণে দেখা গেছে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়কালে তালিকাভুক্ত ২৫১ কোম্পানির ঋণের মোট পরিমাণ ছিল এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৯০ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৭৭ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির।
জাতীয় সংসদে প্রকাশিত ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দেখা যায়, পুঁজিবাজারে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ঢাকা ডাইং শীর্ষ ঋণখেলাপি। এ কোম্পানির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০৪ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকার ওপর খেলাপি ঋণ রয়েছে আরও চার কোম্পানির। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ১৮৫ কোটি টাকা। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১৮৪ কোটি টাকা, পিপলস লিজিংয়ের ১৬৯ কোটি এবং এমারেল্ড অয়েলের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩৬ কোটি টাকা।
১০০ কোটি টাকার কম, কিন্তু ৫০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ আছে এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৬টি। এর মধ্যে আফতাব অটোমোবাইলসের ৯৫ কোটি, সাইফ পাওয়ারটেকের ৮৭ কোটি, অ্যাপোলো ইস্পাতের ৬৮ কোটি, আজিজ পাইপসের ৬৭ কোটি, কেয়া কসমেটিক্সের ৫৯ কোটি এবং আরামিট সিমেন্টের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫১ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে থাকা এফএএস ফাইন্যান্সের সাড়ে ৪৯ কোটি টাকা, জুট স্পিনার্সের ৪৯ কোটি, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ৪৮ কোটি, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৩ কোটি, রিং শাইন টেক্সটাইলের ৪২ কোটি, ডেল্টা স্পিনার্সের ৩৬ কোটি, এসএস স্টিলের ৩৫ কোটি, সাফকো স্পিনিংয়ের ৩৩ কোটি, রিজেন্ট টেক্সটাইলের ৩১ কোটি ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের নামে ২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।
আরও যেসব কোম্পানি খেলাপি ঋণের তালিকায় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ফিড মিলের ২৪ কোটি টাকা, সিমটেক্সের প্রায় ২১ কোটি, গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের সোয়া ১১ কোটি, ড্রাগন সোয়েটারের ৭ কোটি ৬৭ লাখ, মুন্নু সিরামিকের ৬ কোটি ৮৩ লাখ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিংয়ের ৫ কোটি ৯৩ লাখ, তাল্লু স্পিনিংয়ের ৫ কোটি, ইনটেক অনলাইনের ৩ কোটি ৬৫ লাখ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৩ কোটি ৬৩ লাখ, ইমাম বাটনের ২ কোটি ৪৬ লাখ এবং ইফাদ অটোসের ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, ওটিসি মার্কেটের সালেহ কার্পেটের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিডি মনোস্পুল পেপারের খেলাপি ঋণ ৬৬ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ইলেক্ট্রোডসের ৩০ কোটি, বেঙ্গল বিস্কুটের ১৮ কোটি ৫৮ লাখ, বাংলাদেশ লাগেজের ১২ কোটি ৪০ লাখ, বাংলাদেশ জিপারের ১১ কোটি ৬৯ লাখ, বাংলাদেশ ইলেক্ট্রো মিটারের ৯ কোটি ১৬ লাখ, ম্যাক এন্টারপ্রাইজের পৌনে ৯ কোটি, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের ৮ কোটি ৬৮ লাখ এবং কাশেম সিল্ক্কের খেলাপি ঋণ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
শেয়ারবার্তা / আনিস