ব্যাংকিং খাতে অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকবর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়ার পর এ অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য ঋণ বিতরণ ও খেলাপী ঋণ আদায়ে নজরদারি বাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংগুলোর নতুন ঋণ দেয়ার বিষয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে বড় অংকের ঋণের বিষয়ে কোনো ধরণের অনিয়ম যেন না হয় সে বিষয়টি ব্যাংকগুলোকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। এছাড়া খেলাপী ঋণের বিষয়ে সব তথ্য পর্যালোচনা করছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আগামী এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনছে। সেই জন্য নতুন করে ঋণে অনিয়ম হলে এর ধকল সইতে পারবে না ব্যাংকিং খাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেস টেস্টিং রিপোর্ট অনুযায়ী, বড় কয়েকটি গ্রুপ অব কোম্পানি যদি খেলাপী হয়ে পড়ে তাহলে পুরো ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তথ্য মতে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ঋণ আছে। এর মধ্যে খেলাপি ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
গত ২০১৯ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের খেলাপি ঋণ প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেড়েছে আরও ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের সর্তক করে বলা হয়েছে, গ্রাহকের আমানতের টাকা যেন কোনোভাবে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। ফাইনান্সিয়াল স্টেবিলিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ ৫ ব্যাংকেই ৩২.৭ শতাংশ আমানত রয়েছে। আর অন্যান্য ব্যাংকে ৬৭.৩ শতাংশ আমানত রয়েছে। শীর্ষ ৫ ব্যাংকের মধ্যে একটিও যদি সঙ্কটে পড়ে এর প্রভাব পুরো ব্যাংক খাতে ছড়িয়ে পড়বে। তাই শীর্ষ ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৩০ জুন ২০১৯ শেষে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৭২ দশমিক ১১ বিলিয়ন টাকা। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ৯ হাজার ২৪৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন টাকা।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ অধিগ্রহণ ও পরিচালকদের নিজ ও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণের বিষয়টিও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ভাবিয়ে তুলেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহি পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাত নজরদারির মধ্যেই আছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিয়মিত কাজ। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজরদারি করছে না, ব্যাংকগুলোর পরিচালকদেরও সর্তক করে দেয়া হয়েছে। কোনো কারণে যেন ব্যাংকিং খাতে নতুন কোনো অনিয়ম না হয়। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে এসব নজরদারির ফলে ঋণ প্রবাহ যাতে কমে না যায়, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর অংশ হিসেবে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ (ব্রড মানি) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের শুরুতেই ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে উন্নিত করা হয়েছে।
সার্বিক অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নীতি সুদ হারে কোনো পরিবর্তন না এনে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ও দেশের পুঁজিবাজারসহ বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তাই ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে, সব ধরনের অব্যবস্থা দূর করতে হবে। প্রয়োজনের আরও কঠোর আইন করতে হবে, সব অনিয়ম-অপরাধের বিচার দ্রম্নততর করতে হবে এবং ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল