২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশের মতো কম। এই খবর এল যখন দেশের রপ্তানি আয়, আমদানি, রাজস্ব আদায় ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের পরিস্থিতি ভালো নেই।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ড মনিটর’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। এটি গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। অবশ্য এতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রাথমিক প্রাক্কলন উল্লেখ করা হয়েছে, চূড়ান্ত হিসাব নয়।
প্রতিবেদনটি বলছে, ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় মোট বিনিয়োগ এসেছে ৬ হাজার কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে মূলত ভারতে। আঙ্কটাড বলছে, বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তানেও বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। পাকিস্তান পেয়েছে ১৯০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ, যা আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছিল মূলত ২০১৮ সালে। ওই বছর জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কিনে নেয়। এতে তারা বিনিয়োগ করে ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ফলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে মোট প্রায় ৩৬১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৮ সালেই বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল ৫৮৭ কোটি ডলার। যদিও সে লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলামও মনে করেন, দেশে বাড়তি বিনিয়োগ দরকার। তবে ২০১৯ সালে যে বিনিয়োগ এসেছে, সেটাকে কম বলা যাবে না। তিনি বলেন, জাপান টোব্যাকোর কারণে ২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেশি হারে বেড়ে গিয়েছিল। সেটাকে বাদ দিয়ে দেখা যাবে, বিনিয়োগের ধারা ইতিবাচকই রয়েছে।
এটি আঙ্কটাডের প্রাথমিক প্রাক্কলন। চূড়ান্ত হিসাব আসেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ মোট ১০ শতাংশ বেড়েছে।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বিনিয়োগ বাড়তে বা কমতে পারে। দেখার বিষয় হলো, কতটা এসেছে। আর স্থিতি কত দাঁড়িয়েছে। এখন স্থিতি ভালো বলে দাবি করেন তিনি।
আঙ্কটাড বলছে, ২০১৯ সালে পুরো বিশ্ব মিলিয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১ শতাংশ কম। সার্বিকভাবে উন্নত দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আগের মতোই কমেছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও পড়তির ধারা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে বলেন, ২০১৯ সালে বিদেশি বিনিয়োগ যতটুকু এসেছে, তা সন্তোষজনক। আগের বছর জাপান টোব্যাকোর কারণে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সেটাকে মাপকাঠি ধরা যায় না।
আহসান মনসুর বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ যতটা প্রয়োজন, ততটা আসছে না। লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম। এর কারণ অবকাঠামো এখনো তৈরি নয়। তিনি আরও বলেন, ৩৪০ কোটি ডলারের কতটা বিদ্যুৎ খাতে, আর কতটা অন্য খাতে, সেটা বিশ্লেষণ না করে ভালোমন্দ বলা যাচ্ছে না। যদি বিদ্যুতে বেশি আসে, তাহলে তা হবে দুর্বল প্রকৃতির।
শেয়ারবার্তা / আনিস