1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
পাচার হওয়া অর্থ বিনিয়োগ হলে বদলে যেত দেশের অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম

পাচার হওয়া অর্থ বিনিয়োগ হলে বদলে যেত দেশের অর্থনীতি

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২০
taka

সাম্প্রতিককালে দেশ থেকে অর্থ ও সম্পদ পাচার করে বিদেশে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। পাচার হওয়া সম্পদের অধিকাংশই দুর্নীতি ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জিত। অর্থ ও সম্পদ পাচারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে উপরের সারিতে রয়েছে। একটি জাতীয় দৈনিকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ও সম্পদে বিদেশে স্থায়ীভাবে অভিবাসী হওয়ার কিছু উদাহরণ দিয়ে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। যদিও এটি প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় খুবই কম। এক্ষেত্রে সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি দেশের সম্পদ পাচার হওয়ার ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করা। কী পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে, সে হিসাব জানার অধিকার নিশ্চয়ই জনগণের আছে। বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধ পথে অর্থ ও সম্পদ পাচার করেছে, তা ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ, স্বীকার করি। কিন্তু তাদের নামধাম ও পাচার করা অর্থের পরিমাণ প্রকাশ করতে বাধা কোথায়? দেশে অর্থ ও সম্পদ পাচারবিরোধী কঠোর আইন থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই। বিদেশে পাচার করা সমুদয় অর্থ ফেরত আনার উদ্দেশ্যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি দেশে বিনিয়োগের অনুকূল ও অভয় পরিবেশ নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব। সরকারকে প্রথমেই শক্ত হাতে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে সব সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি যারা পুঁজির নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদেশে টাকা পাচার করে, তাদের মূল সমস্যা জেনে পরিবেশ অনুকূল করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনেক দিন থেকেই কালো টাকা পাচারের গল্পটা এ সমাজে চালু ছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে চাকরি করা লোকেদের মুখে মুখে এ গল্প বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়েছিল। কিন্তু এর পরিমাণ কত বা কোথায় এ টাকা যাচ্ছে, তা ভালোভাবে জানা ছিল না। কালো টাকা পাচারের পরিমাণটা জানিয়েছে জিএফআই আর দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) জানিয়েছে কার কার টাকা কোথায় আছে, যা ‘পানামা পেপারস’ ও ‘অফশোর লিংকস’ নামে পরিচিত। আইসিআইজের দেয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ৫৬ জনের নাম রয়েছে এ দুই তালিকায়। এদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতা, তাদের স্ত্রীরা ও বিদেশী নাগরিক। বাংলাদেশের আইনে দেশের টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করার বিধান নেই। সম্প্রতি কিছু বিশেষ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমতি অনুসারে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে তার পরিমাণ যৎসামান্য। পাচারকারীরা বিভিন্ন সময়ে ওভার-আন্ডার ইনভয়েসিং করে অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত চ্যানেলের বাইরে দিয়ে বিপুল অংকের টাকা দেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। তারা দেশে বা যেখানে টাকা পাচার করেছে, কোনোখানেই কর দিতে হয়নি। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি ও মানুষ। পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ হলে বদলে যেত বাংলাদেশের অর্থনীতি। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।

যাদের নাম প্রকাশ হয়েছে এবং যাদের নাম এখনো প্রকাশ হয়নি, কিন্তু একই রকমের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশন এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখতে পারেনি। টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের তারা চিহ্নিত করে সে টাকা ফিরিয়ে আনতে এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে পারবে, এমন ভরসা দেশবাসীর নেই। তাদের আরো কার্যকর করতে প্রশাসনিক গতিশীলতা আনতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আইনি কাঠামো জোরদার করা দরকার। দুর্নীতি দমন করা দরকার সবার আগে। এ লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। অর্থ পাচার রোধে আইনি ফাঁকফোকর বন্ধ করা এবং ব্যাংক ও কর প্রশাসনের সঙ্গে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি তৈরির মাধ্যমে প্রতিটি বৈদেশিক লেনদেন অনলাইন নিরীক্ষা করা দরকার। আন্তর্জাতিক ফোরাম ও জাতিসংঘে চুক্তি করে সব দেশের পণ্যমূল্যের ব্যাপারে একটা কমন ও স্বচ্ছ প্লাটফর্ম তৈরি করা, অন্য দেশ থেকে টাকা পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং পাচার করা টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এসব কাজ করতে না পারলে জিএফআই ও আইসিআইজের দেয়া তথ্য বাংলাদেশের কাজে আসবে না।

ভারত সরকার বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে জাতিসংঘের সহায়তা নিয়ে সফল হয়েছে। অবৈধভাবে নিয়ে যাওয়া সম্পদ সফলভাবে ফেরতও এনেছে কিছু ক্ষেত্রে। বাংলাদেশও অবৈধ অর্থ ফেরত আনতে জাতিসংঘের সহায়তা নিতে পারে। যারা অর্থ পাচার করছে, তাদের চিহ্নিত করা কঠিন কিছু নয়। এটি ওপেন সিক্রেট। তাদের আয় ও অর্থের উৎস সম্পর্কে খোঁজখবর নিলে সহজেই তা ধরা পড়ার কথা। প্রয়োজন এ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা ও আন্তরিকতা। এক্ষেত্রে সরকারকেও জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা জরুরি। দেশের উন্নয়নের স্বার্থেই তা সরকারকে করতে হবে। দেশ থেকে যদি এভাবে অর্থ পাচার হয়ে যায়, বিনিয়োগ না হয়, তবে উন্নয়নের কথা বলা অর্থহীন ও অবিশ্বাসযোগ্য বলে পরিগণিত হবে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছি, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলে সে স্বপ্নপূরণ যে সুদূরপরাহত হয়ে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। যে হারে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে দেশ ‘শূন্য ঝুড়িতে’ পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। একদিকে অর্থ পাচার ঠেকাতে হবে, অন্যদিকে অর্থ বিনিয়োগের সুব্যবস্থাও করতে হবে।

শেয়ারবার্তা / হামিদ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ