শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দুর্বলতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিষ্ফ্ক্রিয়তার কারণে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বের পরিবর্তন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। আইনত বিএসইসির চেয়ারম্যান পরপর দুই মেয়াদের বেশি নিয়োগ পেতে পারেন না। বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি পুঁজিবাজারের খারাপ পরিস্থিতি উত্তরণে কোনো শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেননি বা পারছেন না। ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এই আস্থা ফেরানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই ভূমিকা নিতে হবে। অন্য কোনো উদ্যোগ এ মুহূর্তে বাজারে আস্থা ফেরাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
এর আগে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে বিপর্যয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি বিপর্যয়ের পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের বাজারে অস্থিরতার পেছনে দায়ী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তারাই বর্তমানে বাজারের কলকাঠি নাড়ছেন। এসব ব্যক্তির ক্ষমতা খর্ব করা এবং তাদের শেয়ারবাজার থেকে দূরে রাখা খুবই জরুরি। তা না হলে বাজারের বিশৃঙ্খলা দূর হবে না। আর এগুলো করতে পারে একমাত্র সরকার। নীতিনির্ধারণী উদ্যোগ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় নেই। তবে শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন করলেই হবে না। দক্ষ এবং শক্ত ব্যক্তি, যিনি ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবেন, এমন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে হবে। তাহলে বাকি কাজ, অর্থাৎ শেয়ারবাজারের নিয়মতান্ত্রিক পর্যবেক্ষণ বিএসইসি নিজেই করতে পারবে।
শেয়ারবাজারে এখনকার সংকটের জন্য ব্যাংকের তারল্য সংকটের যে তত্ত্ব বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ মুখ্য নয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই এখানে মুখ্য। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষের আয় বাড়ছে। মানুষের হাতে প্রচুর নগদ অর্থ রয়েছে। ফলে তারল্য সংকটের কারণে বাজারে পতন হচ্ছে- এ কথা বলা ঠিক হবে না। আস্থাহীনতার কারণে মানুষ শেয়ারবাজারে আসছেন না বা যারা আছেন, তারা বেরিয়ে যেতে চাইছেন। বিনিয়োগকারীরা সবই বোঝেন। তারা তো জেনেবুঝে আগুনে হাত দেবেন না। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক হলে বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আসবেন।
লেখক : সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক