দেশের শিল্পায়নের পুঁজির অন্যতম উৎস শেয়ারবাজার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমছে। তাই বাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে সব পক্ষকে নিজ নিজ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন।
বিএসইসির কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানে শেয়ারবাজারের রিপোর্টারদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) নেতারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী, ড. স্বপন কুমার বালা, খোন্দকার কামালুজ্জামান, নির্বাহী ফরহাদ আহমেদ, সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম যেভাবে কমছে, তা স্বাভাবিক নয়। কারণ বেশকিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে যা বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল ৩ অনুসারে ব্যাংকগুলোর ক্যাপিটাল বাড়ানো হচ্ছে। নিয়ম অনুসারে ব্যাংকগুলো রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২৫ শতাংশ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ থাকার কথা। কিন্তু দু-একটি ব্যাংক ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকের এই পরিমাণ বিনিয়োগ নেই। ফলে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে আরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
ড. খায়রুল হোসেন বলেন, বাজারে অনেক স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) রয়েছে। আর বাজারকে ভালো করার দায়িত্ব সবার। এ কারণে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তার মতে, পৃথিবীর কোনো দেশে সূচক কমলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করা হয় না। কারণ সূচক ওঠানামার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার নয়। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। এখানে সূচক কমলেই কয়েকজন বিনিয়োগকারী বিএসইসির বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সাধ্য অনুসারে চেষ্টা করছে বিএসইসি। কিন্তু প্রচারে সমস্যা রয়েছে। আমরা যত ভালো কাজ করছি, সবকিছু গণমাধ্যমে আসছে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তারল্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমার মতে, ওই তারল্য সংকট নেই। কারণ ব্যাংকগুলো মুনাফা করছে। ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, বাজার উন্নয়নে সাংবাদিকদের ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে সঠিক বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।
হাসান ইমাম রুবেল বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা শেয়ারবাজার থেকেই সবার আগে বোঝা যায়। সেক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, ওই তথ্যে কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে। তার মতে, আমাদের আমদানি, রফতানি এবং বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহসহ সবকিছুই নেতিবাচক। শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
অন্য বক্তারা বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, বীমা, টেক্সটাইল, টেলিকম, সিমেন্ট এবং সিরামিক উল্লেখযোগ্য। আর এই খাতগুলোই শেয়ারবাজারের ৬০ শতাংশের বেশি কাভার করে। কিন্তু সব খাতের অ্যাসোসিয়েশনগুলো বলছে, তাদের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়ছে। সাংবাদিক নেতারা আরও বলেন, শেয়ারবাজারে পতন হলে বিএসইসি সাপোর্ট দেয়। দীর্ঘদিন থেকে বাজারে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বেড়েছে। এ কারণে বাজারে দরপতন হলে বিনিয়োগকারীরা কমিশনের দিকে তাকিয়ে থাকে। এটি কোনো সুস্থ সংস্কৃতি নয়। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন করছে কি না, বিএসইসিকে তার নজরদারি করতে হবে। কেউ কারসাজি করলে আইন অনুসারে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শেয়ারবার্তা / আনিস