২০১০ সালে হঠাৎ করেই বাজারে বড় ধস নেমেছিল। তখন ধসের চিত্র ছিল ভিন্ন এরপরে গত ৯ বছর ধরে বাজারে ধীরে ধীরে ধস নামিয়ে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি চুষে খাচ্ছে। এ অর্থগুলো বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো কেন তদন্ত হচ্ছে না? বিনিয়োগকারীর টাকা দিয়েই অনেকেই আজ বাড়ি-গাড়ি করেছেন এবং বিদেশে আমোদ-প্রমোদ করছেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীর কথা কেউ ভাবছেন না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী, ৭১ টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ।
ফজলুল বারী বলেন, ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে ধসের চিত্র ছিল ভিন্ন। কারণ তখন হঠাৎ করে বাজারে এ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত ৯ বছর ধরে বাজার ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীর পুঁজি চুষে খাচ্ছে। এ অর্থগুলো বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো কেন তদন্ত হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীর টাকা দিয়েই তারা আজ বাড়ি-গাড়ি করেছেন এবং আমোদ-প্রমোদ করছেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীর কথা কেউ বিবেচনা করছেন না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা এখন ভালো নেই। আর দেশের অর্থনীতি যতই সুখবর দিক না কেন। এর ভিত্তি কিন্তু অনেক নড়বরে হয়ে গেছে। আবার যদি তেলের দাম বাড়ে তখন দেশের কি অবস্থা হবে? সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে। তবে যদি এ পুঁজিবাজারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় এবং ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট দূর করা যায়, একদিকে অর্থনীতি চাঙা হবে, অন্যদিকে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, যখন পুঁজিবাজারের শেয়ারদর বাড়ে তখনই হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। কেন ওই শেয়ারের দর বাড়ল। শেয়ারেরদর বাড়লেই ডিএসই থেকে সেটার তদন্ত করা হয়। আবার যখন শেয়ারের দর কমে, তখন কেউ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। আসলে এখানে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোথায় হস্তক্ষেপ করতে হবে? যখন সঠিক জায়গায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তখনই সুফল আসবে। আবার যেখানে হস্তক্ষেপ করার দরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করা হলো না, তখন সেটি বাজারে দীর্ঘমেয়াদি কুফল বয়ে আনবে। সেটাই এখন বাজারে দেখা যাচ্ছে। বাজারের এ অবস্থার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই দায় এড়াতে পারে না। ২০১০ সালে বাজারধস হয়, তখন অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছেন। আবার ২০১৯ সালের বাজারে ধারাবাহিক দুর্যোগ দেখা গেছে। যেটা ধারাবাহিক রক্তক্ষরণের মতো।
সুলতান মাহমুদ বলেন, আজ পুঁজিবাজারে এ অবস্থা কেন? অনেকেই বলতে দেখা যায় বাজারের কারসাজিকারীদের শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু সেটা কী হচ্ছে? ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বাজার যে কেলেঙ্কারি হয়েছিল। এ দুটি বাজারের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। এ কেলেঙ্কারির সঠিক বিচার হয়নি। এ বিচার না হওয়াতে ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তারাই আজ বাজারে কারসাজি করছে। এর সঙ্গে আরও কিছু ব্যক্তি সংঘবদ্ধ হয়েছে। আবার যখন ডিএসইর আধুনিকায়ন হয়নি, তখন অনেকেই বলেছেন বাজারে কারসাজির সঙ্গে ডিএসইর কেউ রয়েছে। যখন ডিএসইকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলো, এরপরই ব্রোকারেজ হাউজের মালিকরা একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করল। ওই সংগঠনের প্রতিনিধি ডিএসইতে রয়েছে। কিন্ত তারা প্রতিনিধি হয়ে বিনিয়োগকারীর স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থের কথা বেশি চিন্তা করেন। তাদের মুখে সরাসরি এ কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। তাহলে পুঁজিবাজারের ভাগ্য কার হাতে রয়েছে?
শেয়ারবার্তা / মিলন