দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের উদ্দেশ্য আগামীকাল মঙ্গলবার আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করবে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন রাষ্ট্রায়াত্ত্ব বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক এক এমডি। যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে।
প্রায় ৬ মাস ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছাড়াই চলছে ডিএসই। এর আগে দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য এমডি হিসাবে কাউকে পাওয়া যায়নি। এবার তৃতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তি খোজাঁর জন্য আগামিকাল সাক্ষাতকার অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৬ জন প্রার্থীকে ডাকা হয়েছে। তবে ৬ জনের মধ্যে ১ জন বিদেশে থাকায় সাক্ষাতকারে অংশগ্রহন করবেন না বলে ডিএসই কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করেছেন।
বাকি ৫ জনের মধ্যে রয়েছেন- আইসিবির সাবেক এমডি, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি, ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক এমডি, জনতা ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের সাবেক সচিব ও সিএফও। এরমধ্যে আইসিবির সাবেক এমডিকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে তদবির শুরু হয়েছে। এতে ডিএসইর এক পরিচালকেরও অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।
সাক্ষাতকারের তালিকায় আইসিবির সাবেক এমডির নাম আশায় ডিএসইর অনেকে বিস্মিত। যার নাম নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুতেই বাদ দেয়া দরকার ছিল বলে তারা মনে করেন তারা। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সৎ এবং যোগ্য লোক নিয়োগ দেয়ার পক্ষে তারা।
আইসিবির সাবেক ওই এমডিকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলব করার ঘটনাও আছে। তার দায়িত্বরত অবস্থায় ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। শেয়ার ব্যবসায় জড়িত যেসব লোক ঋণ পাওয়ার যোগ্য নন তাদের ঋণ দেয়া, যাকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা তাকে কয়েক কোটি টাকা করে ঋণ দেয়ার ঘটনা ঘটে। এসবের মাধ্যমে সরকারের ১৩৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয় বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও যোগ্য এমডি না পাওয়ায় ডিএসই সময় নিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর তৃতীয় দফায় এমডির খোঁজে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে আগামি ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন পাঠাতে বলা হয়। এতে ২৪ জন আবেদন করেন। এরমধ্য থেকে ৬ জনকে সাক্ষাতকারে ডাকা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ জুলাই ডিএসইর এমডি পদ শূন্য হয়। ওই পদ পূরণে নতুন এমডির খোঁজে গত ৭ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এতে আগ্রহী প্রার্থীদেরকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। যেখানে ১৬ জন আবেদন করেছিলেন। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে কাউকেই যোগ্য মনে করেনি ডিএসইর পর্ষদ এবং নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)। এরপরে গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় এমডির খোজেঁ বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এক্ষেত্রে আবেদন করেছিল ৩ জন। অর্থাৎ দুই দফায় ১৯ জন ডিএসইর এমডি পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিল।
দুই দফায় আবেদনকারীদের মধ্য থেকে গত ২ অক্টোবর ৭ জন প্রার্থীকে সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়। পরবর্তীতে ৭ জনের মধ্যে ৩ জনকে নিয়ে শর্ট লিস্ট করা হয়। যাদেরকে গত ৬ অক্টোবর ডিএসইর পর্ষদ ডাকে। তবে ওই ৩ জনের মধ্যেও কাউকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য যোগ্য মনে করেনি পর্ষদ। যাতে যোগ্য এমডির খোঁজে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬ অক্টোবরের পর্ষদ সভায়। যা গত ১০ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ২০১৬ সালের ২৯ জুন নিয়োগ পান কে এ এম মাজেদুর রহমান। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ জুলাই। তারপর থেকেই পদটি খালি রয়েছে। ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস