পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) প্রধান শাখায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল এই ঋণ জালিয়াতির তথ্য উদ্ঘাটন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদনের আগেই প্রায় ১৪ কোটি টাকা গ্রাহকের কাছে বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের জন্য ঋণ নেয়া হলেও তার কোনো প্রমাণ মেলেনি; বরং এক খাতে ঋণ নিয়ে অন্য খাতের দায় পরিশোধের ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, এক বছরের ব্যবধানে গ্রাহকের অনুকূলে ঋণসীমা বাড়ানো হয়েছে অন্তত ১ হাজার ২৮০ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকিং পরিভাষায় ঋণ বিতরণকে সাধারণত বিনিয়োগ বলা হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ধরনের বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ব্যাংকটিতে সংঘটিত ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ নির্দেশ কতটা বাস্তবায়ন হবে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা কতটা ‘সংশোধন’ হবে, সেটাই প্রশ্ন।
ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায়ই ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে, যার লাগাম টেনে ধরা জরুরি। দুঃখজনক হল, ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি।
এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। মূলত অব্যবস্থা ও দুর্বল আইনের কারণে প্রতি বছর ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে এবং এর সিংহভাগই পাচার হচ্ছে বিদেশে।
দেখা গেছে, অনিয়ম বা জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের অধিকাংশই কুঋণ বা খেলাপি ঋণে পর্যবসিত হয়। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কারের দিকেও মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে না পারলে অর্থনীতি টেকসই হবে না।
অনুমোদনের আগেই বিতরণকৃত প্রায় ১৪ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ বলেই মনে হয়। কেননা অনুমোদনের আগে ঋণ দেয়া হলে তা সাধারণত ফেরত আসে না। বস্তুত এ ধরনের অনিয়মের কারণেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
অনুমোদনের আগে ঋণ বিতরণ কোনো নিয়মের মধ্যেই পড়ে না। তাছাড়া এক খাতের জন্য ঋণ নিয়ে তা অন্য খাতে ব্যবহারও অপরাধ বটে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি শুধু ‘উদ্ঘাটন’ করেই থেমে থাকবে না, এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে; এটাই প্রত্যাশা।
শেয়ারবার্তা / আনিস