পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর ১৪ কার্যদিবসে ৩৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। ব্যাংকটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চট্রগ্রামভিত্তিক এস আলমের দখলে ছিলো। আর এসময় বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটি থেকে সামলোচিত এ গ্রুপটি ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লোপাট করেছে।
তবে সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরের দিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট থেকে এস আলম মুক্ত ব্যাংকের দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে ইসলামী ব্যাংকের সামনে আন্দোলন করেন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। এ নিয়ে একদিন গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এরপর আর এস আলম সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকটিতে ঢুকতে পারেন নি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। একই দিনে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়। নতুন পর্ষদে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
এর মধ্য দিয়ে সাত বছর পর দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এই সাত বছরে ইসলামী ব্যাংকে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপটির।
এদিকে এস আলম মুক্ত হওয়ার পর থেকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে ৩৫ শতাংশের বেশি। গত ৬ আগস্ট ব্যাংকটির শেয়ার দর ছিলো ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। আজ ব্যাংকটির শেয়ারদর ১ টাকা ২০ পয়সা (২.৭৯%) বেড়ে ৪৪ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার দখল করে রেখেছে এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে ২৪ ব্যক্তি ও কোম্পানি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে এসব শেয়ার বিক্রি করে অর্থ লুট করার পায়তারা করেছেে সমালোচিত এ গ্রুপটি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক সহ গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার পরিবারের ২৫ সদস্যদের থাকা শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নামে-বেনামে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের সব শেয়ার সরকারের জিম্মায় থাকবে।
জানা যায়, এস আলমের ছেলে ও ইসলামী ব্যাংকের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমের মালিকানাধীন জেএমসি বিল্ডার্সের নামে ব্যাংকটির শেয়ার রয়েছে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৮১২টি, যা ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ ছাড়া বিটিএ ফাইন্যান্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, এবিসি ভেঞ্চারস, এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, প্ল্যাটিনাম এনডেভার্স, এক্সেলশিয়ার ইমপেক্স, গ্র্যান্ড বিজনেস, লায়ন হেড বিজনেস রিসোর্সেস, বিএলইউ ইন্টারন্যাশনাল, আর্মদা স্পিনিং মিলস, কিংসওয়ে এনডেভার্স, ইউনিগ্লোব বিজনেস, সোলিভ ইন্স্যুরেন্স, হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, হাই ক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, ক্যারেলিনা বিজনেস, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস, ব্রডওয়ে ইম্পেক্স, পিকস বিজনেস, এভারগ্রিন শিপিং, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস ও পারসেপ্টা এনডেভার্স- এসব প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে।
২০১৭ সালে ‘জোরজবরদস্তি’ করে ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃত্ব নেয় এস আলম গ্রুপ। তারপর নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয় গ্রুপটি। তাতে অবনতি ঘটে ব্যাংকটির। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই গ্রুপটি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়। এর মধ্যে খাতুনগঞ্জ শাখা থেকেই ৬৭ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যায়।