বস্ত্র খাতের শিল্প মালিকদের বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা বলেছেন, জ্বালানি সংকটে ধুকতে থাকা বস্ত্র খাতে নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে এখাত বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কায় পড়বে।
বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকনের দাবি, গ্যাস সংকটে এখন যান্ত্রিক সক্ষমতার অর্ধেক অচল। এই সংকটের সমাধান কিংবা বিকল্প সহায়তা চালু করার আগে এ ধরনের উদ্যোগ মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে।
আজ শনিবার (০৭ জুলাই) ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংগঠনের দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়ায় এ শিল্প মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে এবং এ শিল্পের অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। ব্যাপক সম্ভাবনাময় শিল্পটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পাট শিল্পের মতো বিলুপ্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘নভেম্বর ২০২৬ এর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কথা বলে নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে। কিন্তু এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের এখনও প্রায় আড়াই বছর বাকি এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলেও গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শিল্পখাতগুলো নগদ প্রণোদনা পেতে পারে।’
বিটিএমএ’র সভাপতির ভাষ্য, আমাদের পাশের দেশ ভারত ২০০৪ সালে এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েট হলেও এখনও তাদের টেক্সটাইল সেক্টরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নগদ সহায়তার বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে আসছে। অথচ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী দেশ এবং টেক্সটাইল টেকনোলজিতেও বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে।’
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের নামে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা কমিয়ে এই শিল্পে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে এই শিল্প অচিরেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।
বিটিএমএ এর সভাপতি ভারতের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ভারতে পোশাক ও বস্ত্র খাতে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা এবং উপখাতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে। নতুন শিল্প নির্মাণে প্রকল্প ব্যয়ের ৪০ শতাংশ বা ৪০ কোটি রুপি সরকার অর্থায়ন করছে। অন্ধ্র প্রদেশে সবুজ কারখানায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সহায়তা দেওয়া হয়। গুজরাটে টেক্সটাইল পার্কে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মূলধনী ব্যয়ে অর্থায়ন করে সরকার। বিহারে শিল্প স্থাপনের প্রথম ৫ বছরে ২ রুপিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত খরচ ধরা হয়।
তিনি বলেন, বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্বালানি সংকটের কারণে বস্ত্র খাত স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। বিগত কয়েক মাস যাবত তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলো উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এখাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করছে।