২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালন আয়ের ওপর ধার্যকৃত কর কমানোসহ শেয়ারবাজার উন্নয়নে ৮টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
সোমবার (২৪ জুন) বিএমবিএ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, কর হ্রাস করা হলে শেয়ারবাজারে অর্থায়নে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ অন্তর্ভুক্তরা আহ্বান জানিয়েছে।
১. ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণের অধিকাংশ ব্যাংকিং উৎস হতে ধারস্বরূপ সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও অ-ব্যাংকিং উৎস হতে ধার করার মাধ্যমেও বাজেট ঘাটতি পূরণের একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অর্থ সংস্থানের দীর্ঘমেয়াদি উৎস হিসেবে শেয়ারবাজার হতে অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শেয়ারবাজারের প্রাইমারি মার্কেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্ড/সুকুক/ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ইস্যুর মাধ্যমে বাজেটে অর্থায়নের উদ্যোগে নেওয়া যেতে পারে।
২. জাতীয় বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন শেয়ারবাজারের মাধ্যমে করতে হলে এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংক সমূহ। অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজার হতে অর্থায়ন ও শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিকরণে কাজ করে। এসব কাজের আওতা বৃদ্ধি পেলে কর আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহকে তাদের পরিচালন আয়ের ৩৭.৫ শতাংশ কর দিতে হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের কর দিতে হয় ২৭.৫ শতাংশ। এমতাবস্থায় মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহের দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য প্রযোজ্য করের হার ২৭.৫ শতাংশ এ আনয়নে অতি প্রয়োজন। এরুপ কর হ্রাস করা হলে শেয়ারবাজার হতে অর্থায়নে মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তাদের কার্যক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে যা মূলত বাড়তি কর সংগ্রহের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
৩. শেয়ারবাজারের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাইমারি মার্কেট। বিভিন্ন উদ্যোক্তাগণ, এসএমই কোম্পানি, স্টার্ট-আপ কোম্পানি এবং অন্যান্য অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহকে শেয়ারবাজার হতে পুঁজি সংগ্রহ এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য প্রাইমারি মার্কেটকে অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। এতদলক্ষ্যে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কমপ্লায়েন্স এবং আইনকানুন বিনিয়োগবান্ধব ও সহজীকরণ এবং উপদেষ্টা সহায়তা প্রদানের মতো বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ ও অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যকার বিদ্যমান কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ যাহা অতি স্বল্প বিধায় কোম্পানিসমূহের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ কম। জাতীয় বাজেটে তালিকাভূক্ত ও অ-তালিকাভূক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যে কর হারের ব্যবধান বৃদ্ধি করা হলে কোম্পানিসমূহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আকৃষ্ট হবে। এছাড়াও অ-তালিকাভূক্ত বা নতুন নিবন্ধিত কোম্পানিসমূহকে নির্দিষ্ট সময়ান্তে তালিকাভূক্ত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।
৫. দেশের বৃহৎ ও স্বনামধন্য কোম্পানিসমূহ, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক কোম্পানিসমূহকে শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পলিসি সহায়তার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর্পোরেট ট্যাক্সের হার ১৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ছাড় ইত্যাদি প্রদান করা যেতে পারে। এরুপ সুযোগ-সুবিধা অধিক সংখ্যক ভালো ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য পত্রকোষে বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে, বাজারের গভীরতা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি হবে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি তাদের স্টকগুলিকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
৬. শেয়ারবাজার হতে ৫০ লক্ষ টাকার ওপর ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে কর ধার্যকরণের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করে ৫০ লক্ষ টাকার উপরে হতে বিভিন্ন স্ল্যাব ভিত্তিক কর ধার্য করা যেতে পারে এবং এই ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাইলান ট্যাক্স হিসেবে বিনিয়োগকারীর ট্যাক্স ফাইলে বিবেচিত হবে। এছাড়াও শেয়ারবাজার হতে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতকরণ এবং পরিবর্ধন করা যেতে পারে।
৭. শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করায় উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য কর প্রণোদনা, সহজীকৃত বিনিয়োগ পদ্ধতি এবং পলিসি সহায়তার মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।
৮. শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকর নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কর্মক্ষম নীতি সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে এবং সরকারী বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসাবে আইসিবি-কে প্রাথমিক বাজার সম্পর্কিত কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা যেতে পারে।
বিএমবিএ বিশ্বাস করে যে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলি শেয়ারবাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে একটি শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময় শেয়ারবাজার গড়ে তোলা সম্ভব হবে।