দেশে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পরও প্রতি মাসেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রাজস্ব বোর্ডসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট ও ডলারের ঊর্ধ্বমুখী বিনিময় হারের কারণে সরকার পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করেছে। ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র বা এলসি খুলতে জটিলতার মুখে পড়ছেন। তার ওপর একক গ্রাহক ঋণসীমা নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানি কমছে। ফলে কমছে শুল্কবাবদ রাজস্ব আয়ও।
এনবিআরের দেয়া তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬২৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার গত অর্থবছর থেকেই পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি রয়েছে। আমদানি ঋণাত্মক হওয়ায় শুল্ক আয়ও কমে গেছে। আয়কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানো ও কাস্টমস থেকে রাজস্ব আয় কমিয়ে আনা এনবিআরের লক্ষ্য।’
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের এ ছয় মাসে কাস্টম হাউজগুলো ৪৯ হাজার ৬৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। তবে এনবিআরের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টম হাউজগুলোয় ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
ছয় মাসে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য দেয়া হয়েছিল ৭০ হাজার ৮০৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বিপরীতে আয় করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ঘাটতির আকার দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
অন্যদিকে আয় ও ভ্রমণ করে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ খাতে আয়ের লক্ষ্য ছিল ৬০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। আয় হয়েছে ৫১ হাজার ৮২৪ কোটি ২ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
সার্বিক বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে ক্রমান্বয়ে কাস্টমস ডিউটি থেকে রাজস্ব আদায় কমে যাবে। তবে সে জায়গা নিতে হবে ভ্যাট ও আয়করকে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলেও শুল্ক থেকে কর আদায় বাড়াতে হবে। তবে এখন দেশে জিডিপির পরিমাণ বাড়লেও কর আদায় সে হারে বাড়ছে না। এদিকে এনবিআরের নজর দিতে হবে। যারা এখনো করের আওতায় আসেনি, তাদের করের আওতায় আনতে হবে।’
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। এর মধ্যে মূসক থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও কাস্টমস থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।