হিসাব বছর শেষ হবে শতাধিক কোম্পানির। নতুন বছরের প্রথম দিকেই এসব কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। বছর শেষে মুনাফা হলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। এমন অর্ধশতাধিক কোম্পানিকে ঘিরে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা। কোম্পানিগুলো থেকে প্রত্যাশিত ঘোষণা এলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এতে বাজার পরিস্থিতিও ইতিবাচক ধারায় ফিরবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড, আইপিডিসি, ইসলামিক ফাইন্যান্স, লঙ্কাবাংলা, আইডিএলসি, ন্যাশনাল হাউজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স।
বীমা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, কর্নফুলি ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, স্টান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক-বীমা এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত ছাড়াও অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ৩০টি, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৩টি এবং ৪৭টি বীমা কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হবে ডিসেম্বর মাসে। এসব কোম্পানির মধ্যে প্রায় ৬০টির আয় গত তৃতীয় প্রান্তিকে বেড়েছে।
কোম্পানিগুলো ঘিরেই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বাড়ছে। আয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে কোম্পানিগুলো ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে বলে প্রত্যাশা শেয়ারহোল্ডারদের। প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড ঘোষণা এলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এর মাধ্যমে বাজারে সূচকও ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে এমনটিই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বাজারে দীর্ঘদিন মন্দা পরিস্থিতির কারণে শেয়ার দর অনেক কমে গেছে। দরপতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেকে। ক্রমাগত দরপতনের কারণে নতুন করে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। মন্দা বাজারে ক্যাপিটাল গেইনের সুযোগ খুব কম। তাই ডিভিডেন্ড গেইনের প্রত্যাশা ছাড়া সামনে কোনো পথ নেই। ডিসেম্বরে হিসাব বছর শেষ হওয়ার পর কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিলে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ হাউজে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারী তৌহিদুর রহমান পলাশ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বাজারে দরপতনের কারণে আগে যেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলাম তাতে লোকসানে আছি। ব্যাংক-বীমা কোম্পানির শেয়ারে আমার বিনিয়োগ আছে। এসব কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড দিলে কিছুটা ক্ষতি কাটানো সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রমাগত দরপতনে বাজারে অনেক শেয়ারের দর কমে গেছে। প্রাইজ আনিং রেশিও (পিই রেশিও) অনেক কমেছে। অধিকাংশ শেয়ার দর কম থাকায় এখন বিনিয়োগের উত্তম সময়। এছাড়া শতাধিক কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসছে। এসব কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আগ্রহী হবে। বাজারের প্রতি আস্থা বাড়বে তাদের। এর মাধ্যমে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে দীর্ঘদিন দরপতন হচ্ছে। নানা কারণে এ পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে। ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর কেমন আয় হবে তা বলা যাচ্ছে না। যদি এসব কোম্পানির মাধ্যমে আকর্ষণীয় কোনো ডিক্লারেশন (লভ্যাংশ ঘোষণা) আসে তাহলে বলা যাবে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরবে কিনা।
তৃতীয় প্রান্তিকের প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে- ব্যাংক খাতের ২৩টি, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৭টি এবং বীমা খাতের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের আয় বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল