1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
শেয়ার কারসাজিতে হল্টেড করতে সময় নেন ২ মিনিট
বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৮ এএম

শেয়ার কারসাজিতে হল্টেড করতে সময় নেন ২ মিনিট

  • আপডেট সময় : বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০২২
Abul-khayer-hiru

শেয়ারবাজারের আগ্রাসী খেলোয়ার আবুল খায়ের হিরু। যাকে বিনিয়োগকারীর পরিবর্তে গেম্বলার নামেই সবাই চেনে। যিনি শেয়ারবাজারে নির্দিষ্ট কোন শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে হল্টেড করতে (সর্বোচ্চ সীমায় দর বৃদ্ধি বা বিক্রেতাহীন) সময় নেন ২ মিনিট। ওই ২ মিনিটেই সিরিজ লেনদেন করে শেয়ার হল্টেড করে ফেলেন। এভাবেই লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত সিরিজ লেনদেন চলতে থাকে। যেদিন সাধারন বিনিয়োগকারীদের কেনার চাঁপ থাকে, সেদিন তিনি সিরিজ লেনদেন থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। তবে এভাবে অনেকদিন চললেও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়ত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিচারকাজ শেষে তাকে শাস্তি দেওয়া শুরু করেছেন।

কারসাজির জন্য বেছে নেওয়া ফরচুন সুজের শেয়ার গত বছরের ২ জুন সিরিজ ট্রেডিং করে আবুল খায়ের সংঘবদ্ধ চক্রটি। কোম্পানিটির ওইদিন ১৩০০ বার লেনদেন হয়। এরমধ্যে আবুল খায়ের চক্রটি করেছে ৫১৭ বার বা ৩৯.৮০%। এছাড়া ওইদিন কোম্পানিটির ৫৪ লাখ ১৩ হাজার শেয়ার লেনদেনের মধ্যে চক্রটির কেনার পরিমাণ ছিল ২৪ লাখ ৮ হাজার বা মোট লেনদেনের ৪৪.৫০%।

ওইদিন ফরচুন সুজের শেয়ার ২১.৮০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়। তবে আবুল খায়ের সংঘবদ্ধ চক্রটি ১০:৪১:০৭-এ ২২.২০ টাকায় সিরিজ ট্রেডিং শুরু করে। এরপরে ২ মিনিটের মাথায় ১০:৪৩:০৬-এ ২৩.৭০ টাকায় হল্টেড প্রাইসে উঠে যায়। ওই ২ মিনিটে (১০:৪১:০৭ থেকে ১০:৪৩:০৬) কোম্পানিটির মোট ২৬ লাখ ৩৭ হাজার লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে খায়ের চক্রটিই কিনে ১৬ লাখ ১৭ হাজার। যে ২ মিনিটে তারা কোম্পানিটির ৪১৯ বার (হাওলা) লেনদেনের মধ্যে ২৩৬ বার কেনে।

এই লেনদেন থেকে আবুল খায়ের চক্রটি ব্যাংকটির শেয়ার আগের দিনের থেকে দর বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে বলে ডিএসইর তদন্ত কমিটি মনে করে। এই প্রক্রিয়ায় খায়ের গ্রুপ কেম্পানিটির শেয়ারকে ২ জুন ২.১০ টাকা বা ৯.৭২% দর বৃদ্ধি করে ২৩.৭০ টাকায় তুলে।

একইভাবে ৬ জুন ১৩:২৪:৩০ থেকে ১৩:২৬:৩৪ সময়ে খায়ের গ্রুপ ১৬০ বারের সিরিজ ট্রেডিংয়ে ১৬ লাখ ৬১ হাজার লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে ১১ লাখ ৭৪ হাজার বা ৭০.৭২% কিনে নেয়।

এরপরে ১০ জুন ১১:৫১:৫৬ থেকে ১১:৫৪:২১ সময়ে তারা ১৪১ বারের সিরিজ ট্রেডিংয়ে ৭ লাখ ৯৩ হাজার লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে ৭ লাখ ৮২ হাজার বা ৯৮.৬৯% ও একইদিনে আরেক দফায় ১২:৪৯:৫০ থেকে ১৩:১০:২৫ সময়ে তারা ১০৯ বারের সিরিজ ট্রেডিংয়ে ৭ লাখ ১৩ হাজার লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে ৬ লাখ ৭৮ হাজার বা ৯৫.২০% কিনে নেয়।

এভাবে ডিএসইর তদন্তকালীন ২৯ দিনের ব্যবধানে (২০ মে-১৭ জুন ২০২১) কোম্পানিটির দর বাড়ানো হয় ৯৪.৬৭%। এই দর বৃদ্ধিতে বড় ক্রেতা হিসেবে সাকিব আল হাসান, এনআরবিসি ব্যাংক, ইউনুসের সোনালি পেপার, এনআরবিসি ব্যাংকের পারভেজ তমালসহ আবুল খায়ের হিরুর সংঘবদ্ধ চক্র ভূমিকা রেখেছে বলে ডিএসইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই চক্রের মধ্যে আবুল খায়ের ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ক্লায়েন্ট কোড ৭৬৪৭ ও অগ্রনি ইক্যুইটির ক্লায়েন্ট কোড এবিএম৬৪৫ থেকে সবচেয়ে বেশি কিনেছে।

হিরুর ওই কারসাজির সঙ্গে ছিল তার বাবা আবুল কালাম মাতবর, স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বোন কনিকা আফরোজ, তার ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড ও শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান। যে হিরু ফরচুনের কারসাজিতে তার নামের আরও ৫টি বিও হিসাব থেকে লেনদেন করেছেন। যেগুলো ইবিএল সিকিউরিটিজ, রেমন্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ ও এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে রয়েছে।

ডিএসইর ওই তদন্তকালীন সময় হিরু সহযোগিদেরকে নিয়ে কেনার সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রি করে মুনাফা রিয়েলাইজড করেছেন বোন কনিকা আফরোজ। তার ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের (ক্লায়েন্ট কোড ৭৬৭৭) থেকে ৬৩ লাখ কেনার বিপরীতে বিক্রি করা হয় ৫৬ লাখ শেয়ার।

ফরচুন সুজের শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু ১৯টি বিও হিসাব থেকে ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়ে অনেক শেয়ার লেনদেন করে।

ওই ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়ে খায়ের গ্রুপ ফরচুন সুজের ৩ কোটি ৭ লাখ শেয়ার কেনে। এক্ষেত্রে তিনি সহযোগিদের নিয়ে কোম্পানিটির ২৪.৩১% শেয়ার লেনদেন করেন। যেসময়ে তিনি ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার রিয়েলাইজড গেইন করে। এছাড়া আনরিয়েলাইজড গেইন দাড়াঁয় ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এভাবে মুনাফা করতে গিয়ে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে আবুল খায়ের চক্রটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ধারা ১৭(ই)ভি) ভঙ্গ করেছে। এছাড়া তারা সম্মিলিতভাবে ১০ এর বেশি শেয়ার কেনার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহন ও কর্তৃত্ব গ্রহন বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৪(১) লঙ্ঘন করেছে। এছাড়াও গত বছরের ১৩ জুন আবুল খায়ের একই সময়ে নিজের ১টি বিও থেকে ফরচুন বিক্রি ও আরেকটি থেকে তা কিনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ধারা ১৭(ই)(৩) ও সহযোগিরা একইভাবে লেনদেন করে ১৭(ই)(২) ভঙ্গ করেছে।

এ বিষয়ে চলতি বছরের ৭ মার্চ কারন দর্শাতে আবুল কালাম মাতবর ও সহযোগিদেরকে শুনানিতে তলব করা হয়। যার পক্ষে শুনানিতে বক্তব্য দেন আবুল খায়ের।

শুনানিতে খায়ের বলেন, বাজারের উন্নতি করতে ও লেনদেন বাড়াতে আমরা বিপুল পরিমাণে লেনদেনের চেষ্টা করেছি। যে সময় করোনার কারনে বাজারের লেনদেনের পরিমাণ খুবই কমে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির তৈরী হয়েছিল। তবে দেশের অর্থনীতির ভালো অবস্থার কারনে শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থা থাকবে না এবং ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানতাম। এজন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানের মতো ভালো নেতৃত্ব ও কিছু ভালো পার্টিসিপেন্ট দরকার।

তিনি দাবি করেন, ট্রেডারকে ফরচুন সুজের শেয়ার বিভিন্ন তারিখে কেনার জন্য আদেশ দিয়েছিলাম। যেখানে ম্যানুপুলেটিংয়ের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এছাড়া কোম্পানিটির শেয়ার অবমূল্যায়িত ছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের অন্যকোন মোটিভ ছিল না, কিন্তু অবমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফার সুযোগ পেয়েছি।

তিনি বলেন, সবসময় রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস মেনে চলার চেষ্টা করি। আমাদের লেনদেনে শেয়ারবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, যা চূড়ান্তভাবে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বৃদ্ধি করেছে। তারপরেও ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। যা অবহেলার কারনে ও অচ্ছিাকৃতভাবে ঘটেছে। ভবিষ্যতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকব।

তার বক্তব্যে উপস্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে তার ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে কনিকা আফরোজ ও তার সহযোগিদেরকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে কমিশন আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগিদেরকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এই শাস্তির বিষয়ে সম্প্রতি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ