পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে আবারো ভুল করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। কিছুদিন আগেই এসিআই লিমিটেড ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ইউপিজিডিসিএল) মূল সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে ভুল করেছিল ডিএসই। এবার উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশে ভুল করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির শেয়ার ধারণে তথ্য প্রকাশেও দেরি করেছে ডিএসই।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে উত্তরা ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর সে সময় প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারী ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৭ দশমিক ১৮ শতাংশ ছিল। সবার শেয়ার ধারণের সংখ্যা যোগ করলে দাঁড়ায় ৯২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। কিন্তু ১০ মাস ধরে ডিএসইর ওয়েবসাইটে উত্তরা ব্যাংকের প্রোফাইলে এ ভুল তথ্য প্রদর্শন করা হয়েছে।
অথচ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সে সময় উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে ব্যাংকটির প্রতি মাসের শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠাতে হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটি স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে শেয়ার ধারণসংক্রান্ত যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল, সেখানেও উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারণকৃত শেয়ার সংখ্যা ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে।
উত্তরা ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্যে অসামঞ্জস্যতার বিষয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রথমে জানান, এ বিষয়ে ব্যাংক থেকে যে তথ্য পাঠানো হয়, সেটিই তারা প্রকাশ করে থাকেন। তাই এ বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তারা। এ বিষয়ে উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি পরীক্ষা করে জানান, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে ব্যাংকটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং এ তথ্যই তারা স্টক এক্সচেঞ্জকে দিয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আবার ডিএসই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়টি জানানো হয়। গতকাল বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ডিএসইর ওয়েবসাইটে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সময়ে উত্তরা ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ দেখানো হলেও এর পরে ডিএসই কর্তৃপক্ষ সেটি সংশোধন করে শেয়ার ধারণের পরিমাণ ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রকাশ করে।
উত্তরা ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের ভুল তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশের ক্ষেত্রে বিলম্বও করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। গতকালের আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিএসইর ওয়েবসাইটে উত্তরা ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ার ধারণের তথ্য ছিল। সাধারণত মাস শেষ হওয়ার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যেই শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে পৌঁছে যায়। তবে কখনো কখনো কিছুটা দেরি হয়। ব্যাংকটি কর্মকর্তারা জানান, তারা নভেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যেই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে শেয়ার ধারণের তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে মঙ্গলবার ডিএসই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে পরীক্ষা করে দেখার জন্য কিছুটা সময় নেন। অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে ব্যাংকটি অক্টোবর মাসের শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিএসইর তথ্য প্রকাশে বেশকিছু ভুল আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে এক্সচেঞ্জটির সঙ্গে আলোচনা করব।
শেয়ারবার্তা / আনিস