পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সম্প্রতি সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছিলেন ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকারসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে সুনির্দিষ্ট এবং বিশদ কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তাব জানতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের কাছে বিশদ কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তাব জমা দিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারে কী পরিমাণ শেয়ার ও তারল্য সরবরাহ হয়েছে, সেটির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে তারা সরকারের কাছে পুঁজিবাজারের সমস্যার দিকটি তুলে ধরেছেন। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিবিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছেন তারা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে মন্দা পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে সহজ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে। এ অর্থ তারা ভালো ও মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন। তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বেশকিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেয়, গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি রয়েছে, বাজার মূলধন ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা এবং গড়ে ১০ শতাংশ হারে রিটার্ন অন ইকুইটি (আরওই) রয়েছে এমন কোম্পানিতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। এ তহবিলের অর্থ সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হবে। একটি আলাদা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, যাতে সরকার বিষয়টি মনিটরিং করতে পারে।
পুঁজিবাজারভিত্তিক সব ইন্টারমিডিয়ারিজ ৩ শতাংশ সরল সুদে ছয় বছরের জন্য ঋণ সুবিধা পাবেন এ তহবিল থেকে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর ইকুইটি ক্যাপিটালের ৫০ শতাংশ হারে ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ঋণ নেয়ার পর প্রথম বছর সুদ কিংবা আসল কোনোটাই দিতে হবে না। দ্বিতীয় বছর থেকে সুদ দিতে হবে। আর তৃতীয় বছর থেকে সুদ ও আসল ষাণ্মাষিক কিস্তিতে ফেরত দিতে হবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পরিচালক ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সরকারের কাছে একটি বিশদ কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তাব জমা দিয়েছি। পুঁজিবাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এলে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে এবং এতে স্টক এক্সচেঞ্জের আয়ও বাড়বে। পাশাপাশি লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে তাদের আয়ও বাড়বে। আর এসব খাত থেকে তখন সরকারের রাজস্বের পরিমাণও বেড়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে কোনো অনুদান কিংবা সহায়তা চাইছি না বরং স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা চাইছি, যাতে পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করা যায়।
উল্লেখ্য, গত ২০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সঙ্গে তহবিলের বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। সভায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিডওয়ে সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান ও ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএসই পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের সিইও মো. আনোয়ার হোসেন, ব্যাংক এশিয়ার সিকিউরিটিজের সিইও সুমন দাশ, সিটি ব্রোকারেজের সিইও মিসবাহ উদ্দিন আফফান ইউসুফ এবং এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেসের পরিচালক মো. রেজাউর রহমান। সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সুনির্দিষ্ট ও বিশদ কর্মপরিকল্পনা এবং প্রস্তাব জমা দিতে বলেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে তাদের কর্মপরিকল্পনা ও প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস