পুঁজিবাজারকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে শুধু এক পক্ষ লাভ করে যাবে, অন্য পক্ষ লাভ করতে পারবে না। এক পক্ষ ক্রমাগত লাভ করে যাচ্ছে, যা এক ধরনের ক্যাসিনোর মতো। পুঁজিবাজার ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই হয়নি বাজারে। আসলে যদি আমের নাম পরিবর্তন করে জাম রাখা হয়, তাহলে সেটি কিন্তু জাম হয়ে যাবে না। অর্থাৎ, ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে শুধু নামেই। বাজারে যতগুলো কারসাজি হয়েছে, সেগুলোর কোনো শাস্তি হয়নি।
এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে রোববার বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন বলেন, পুঁজিবাজারে একটি গোষ্ঠী ক্রমাগত লাভ করে যাচ্ছে। যারা বাজারে ইস্যু আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে ইস্যু ম্যানেজার, যারা প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনছেন এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত, তারাই বেশি লাভবান হচ্ছেন-এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সে সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ, এ বাজারে এক পক্ষ ক্রমাগত লাভ করে যাচ্ছে, যা এক ধরনের ক্যাসিনোর মতো। বাজারকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে শুধু এক পক্ষ লাভ করে যাবে, অন্য পক্ষ কোনো লাভ করতে পারবে না। বাজারকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই হয়নি বাজারে। আসলে যদি আমের নাম পরিবর্তন করে জাম বলা হয়, তাহলে সেটি কিন্তু জাম হয়ে যাবে না। অর্থাৎ, ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছে শুধু নামেই। বাজারে যতগুলো কারসাজি হয়েছে, তার কোনো শাস্তি হয়নি। আসলে আমাদের দেশে শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থা না হলে কোনো এ বিষয়ে বিচার পাওয়া খুবই কষ্টকর। দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের ঋণখেলাপি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেই পাকিস্তান আমল থেকে। এটা সরকারকে দোষারোপের বিষয় নয়। এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে বড় ধরনের কোনো ঋণখেলাপির বিচার করতে দেখা যায়নি। দেখা গেছে, সামান্য ঋণখেলাপের জন্য কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। ঠিক তেমনই পুঁজিবাজারেও সেটি লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, দেশে কালোটাকার পরিমাণ জিডিপির প্রায় অর্ধেক।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে হলে ভালো ইস্যু আনতে হবে। গ্রামীণফোন ও এক্মি ল্যাবরেটরিজের পর তেমন কোনো ভালো কোম্পানি বাজারে আসেনি। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাজারে আনা হবে-এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু এখন পর্যন্ত ওইসব কোম্পানি বাজারে আসেনি। বিনিয়োগকারীরা একটি ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন এবং সেখান থেকে ভালো লভ্যাংশ পাবেন-সে ধরনের আস্থা তৈরি করতে পারেনি বাজার। আবার বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অনেক কোম্পানি আবেদন করে রেখেছে; কিন্তু সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। গত ১০ বছরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারে কারসাজিকারীদের দৃশ্যমান কোনো শাস্তি দিতে দেখা যায়নি। কিছু নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ অনেকটা কমে গেছে। এখন অনেকগুলো অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগের অনেক সমস্যা চিহ্নিত করেছেন এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারসংক্রান্ত অনেক কাজ হাতে নিয়েছে। এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিপালন হলে বাজার ভালো হবে বলে আশা করি।
শেয়ারবার্তা / ০২ ডিসেম্বর ২০১৯