মো. মনিরুজ্জামান : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির দুই ধরণের শেয়ার রয়েছে। ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বা লেনদেনযোগ্য শেয়ার এবং লকইন শেয়ার বা স্পন্সর শেয়ার।
ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বা লেনদেনযোগ্য শেয়ার হলো- যে শেয়ারের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ বা খবরদারি থাকে না। অর্থাৎ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার সহজে বিক্রিযোগ্য। প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হলো ফ্রি ফ্লোট শেয়ার।
অন্যদিকে, লকইন শেয়ার বা স্পন্সর শেয়ার হলো নিয়ন্ত্রিত শেয়ার বা লকড শেয়ার। যে শেয়ার সহজে লেনদেনযোগ্য নয়। যে শেয়ারের উপর সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের নানা রকম শর্ত থাকে। সে সব শর্ত প্রতিপালন করে লকইন শেয়ার বিক্রি করতে হয়। উদ্যোক্তা শেয়ার বা উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার হলো লকইন শেয়ার।
তালিকাভুক্ত যে সব কোম্পানির ফ্রি ফ্লোট শেয়ার কম, সাধারণত সে সব শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি থাকে। বিশেষ করে বড় বিনিয়োগকারীদের নজর সব সময়ে বেশি থাকে। কারণ এসব শেয়ার কম হওয়ায় ফ্লে করা সহজ হয়। এ কারণে দেখা যায়, কম ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বছরজুড়েই টানাটানিতে থাকে। ফলে কম ফ্রি ফ্লোটের শেয়ারদর বরবারই বেশি থাকে। অন্যদিকে, বেশি ফ্রি ফ্লোটের শেয়ারদর তুলনামূলকভাবে কম থাকে। বাজার সংশ্লিষ্টদের এমনটাই অভিমত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি সব খাতে যেসব কোম্পানির ফ্রি ফ্লোট শেয়ার কম, সে সব শেয়ারের চাহিদা ব্যাপক। শেয়ারদরও থাকে আকাশচুম্বী। তবে এই নিয়ম সব সময় যে সঠিক হবে, তা নয়।
আজকের আলোচ্য বিষয়- নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতে কোম্পানির ফ্রি ফ্লোট শেয়ার। পুঁজিবাজারে বর্তমানে নন-ব্যাংকিং আথিক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। এই ২৩টি কোম্পানির মধ্যে সর্বোচ্চ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বা লেনদেনযোগ্য শেয়ার রয়েছে ৯টি কোম্পানির। যাদের ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের পরিমাণ ১০ কোটির উপরে। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন ফ্রি ফ্লোট শেয়ার রয়েছে ১৪টি কোম্পানির। যাদের ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের পরিমাণ ১০ কোটির নিচে।
সর্বনিম্ন ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ১৪ কোম্পানি:
১০ কোটির নিচে ফ্রি ফ্লোর শেয়ার থাকা ১৪ কোম্পানিরর মধ্যে আইসিবির ফ্রি ফ্লোট শেয়ার রয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫ হাজার ৫১৫টি, ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্সের ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ২১৯টি, বিআইএফসির ৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫৪ হাজার ২২৭টি, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৬ কোটি ৯৫ লঅখ ৭৯ হাজার ৭৩২টি, উত্তরা ফাইন্যান্সের ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার ১২৪টি, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৮ কোটি ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৭টি, ডিবিএইচের ৮ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ১০০টি, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ৯ কোটি ১ লাখ ৩৩ হাজার ১১০টি, জিএসপি ফাইন্যান্সের ৯ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ২৮টি, প্রিমিয়ার ফাইন্যান্সের ৯ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৭টি, ইসলামি ফাইন্যান্সের ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ২৭৫টি, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৭টি, বে লিজিংয়ের ৯ কোটি ৮৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮টি এবং ফনিক্স ফাইন্যান্সের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার ৭২২টি শেয়ার।
সর্বোচ্চ ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ৯ কোম্পানি:
১০ কোটির উপরে ফ্রি ফ্লোট শেয়ার থাকা ৯ কোম্পানির মধ্যে প্রাইম ফাইন্যান্সের রয়েছে ১১ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৭৫টি, আইপিডিসির ১১ কোটি ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৭টি, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ১১ কোটি ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০টি, বিডি ফাইন্যান্সের ১২ কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৫৩টি, ফাস ফাইন্যান্সের ১২কোটি ৯৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৫২টি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ২৭০টি, আইডিএলসির ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪৯৮টি, পিএলএসএফএলের ২১ কোটি ৯১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩৪টি এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৩৮১টি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফ্রি ফ্লোট কম থাকার কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে বলে কোম্পানিগুলোর দর তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে এবং মূল্য আয় অনুপাতও (পিই রেশিও) সাধারণ বেশী থাকে।
অন্যদিকে, ফ্রি ফ্লোট বেশি থাকা কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বেশি থাকে বিধায় বেশি ফ্রি ফ্লোটের শেয়ারের দর তুলনামূলক কম থাকে এবং মূল্য আয় অনুপাতও কম হয়। যদিও সব সময় এই নিয়ম সঠিক হয় না। নিচের তথ্য থেকে সেটি সহজেই বুঝা যায়।
সর্বনিম্ন ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ১৪ কোম্পানির পিই রেশিও:
সর্বশেষ শেয়ার দর অনুযায়ী, ১০ কোটি টাকার নিচে ফ্রি ফ্লোটের ১৪ কোম্পানির পিই রেশিও হলো-আইসিবির ৬৫.০৪, ন্যাশনাল হাউজিংয়ের ১৫.১৪ , বিআইএফসির (নেগেটিভ) , ফার্স্ট ফাইন্যান্সের (নেগেটিভ), উত্তরা ফাইন্যান্সের ১৭.০১, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৫১.০৫, ডিবিএইচের ১০.০২, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ৩৭.২৯, জিএসপি ফাইন্যান্সের ১৫.৬১, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৫৫.৯১, ইসলামি ফাইন্যান্সের ১৩.৪৮, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের (নেগেটিভ), বে লিজিংয়ের ২০.৪১ এবং ফনিক্স ফাইন্যান্সের ২৩.৮০।
সর্বোচ্চ ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের ৯ কোম্পানির পিই রেশিও:
১০ কোটি টাকার বেশি ফ্রি ফ্লোটের ৯ কোম্পানির পিই রেশিও হলো-প্রাইম ফাইন্যান্সের ৩২৭.৫০, আইপিডিসির ১৩.০৯, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৩২৭.৫০, বিডি ফাইন্যান্সের ২০.৬৫, ফাস ফাইন্যান্সের (নেগেটিভ), ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের (নেগেটিভ), আইডিএলসির ১২.৪৪, পিএলএসএফএলের (নেগেটিভ) এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ২০.৩৩।
আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির মোট শেয়ার, মোট ফ্রি ফ্লোট শেয়ার ও সর্বশেষ পিই রেশিও:
ক্রমিক | কোম্পানির নাম | মোট শেয়ার | ফ্রি ফ্লোট শেয়ার | পিই রেশিও |
১ | আইসিবি | ৮০,৫৮,১৫,,৫২৭ | ২,৫৭,০৫,৫১৫ | ৬৫.০৪ |
২ | ন্যাশনাল হাউজিং | ১১,৭০,৩১,২০০ | ৩,৪৯,৫৭,২১৯ | ১৫.১৪ |
৩ | বিআইএফসি | ১০,০৬,৭৯,৯৪৪ | ৫,৯৮,৫৪,২২৭ | নেগেটিভ |
৪ | ফার্স্ট ফাইন্যান্স | ১১,৮৫,৫৪,৬৬৩ | ৬,৯৫,৭৯,৭৩২ | নেগেটিভ |
৫ | উত্তরা ফাইন্যান্স | ১৩,১৪,৮১,৫০৪ | ৭,৩০,৫১,১২৪ | ১৭.০১ |
৬ | মাইডাস ফাইন্যান্স | ১৩,৮৯,৯৩,০০৪ | ৮,১৫,১৯,৩৯৭ | ৫১.০৫ |
৭ | ডিবিএইচ | ১৭,৭২,৬৩,৯৬৮ | ৮,৬২,৯২,১০০ | ১০.০২ |
৮ | ইউনাইটেড ফাইন্যান্স | ১৮,৭১,১৪,৬১৫ | ৯,০১,৩৩,১১০ | ৩৭.২৯ |
৯ | জিএসপি ফাইন্যান্স | ১৪,২৭,৮৯,৬২৩ | ৯,২০,৮৫,০২৮ | ১৫.৬১ |
১০ | প্রিমিয়ার লিজিং | ১৩,২৯,৭০,২১০ | ৯,৩০,৭৯,১৪৭ | ৫৫.৯১ |
১১ | ইসলামি ফাইন্যান্স | ১৪,০৩,২৬,৬৭২ | ৯,৪৬,২২,২৭৫ | ১৩.৪৮ |
১২ | ফারইস্ট ফাইন্যান্স | ১৬,৪০,৬৩,৩৩০ | ৯,৫৩,৫৩,৬০৭ | নেগেটিভ |
১৩ | বে লিজিং | ১৪,০৮,৮৮,৪৪৩ | ৯,৮৫,২৩,২৮৮ | ২০.৪১ |
১৪ | ফনিক্স ফাইন্যান্স | ১৪,৮১,০১,৯৬১ | ৯.৯৮,২০,৭২২ | ২৩.৮০ |
১৫ | প্রাইম | ২৭,২৯,১৬,৪৮৩ | ১১,১৫,১৩,৬৭৫ | ৩২৭.৫০ |
১৬ | আইপিডিসি | ৩৭,১০,৯১,৫৪৭ | ১১,১৬,২৪,৩৩৭ | ১৩.০৯ |
১৭ | ইউনিয়ন ক্যাপিটাল | ১৭,২৫,৭৩,৮৪৩ | ১১,১৮,২৭,৮৫০ | নেগেটিভ |
১৮ | বিডি ফাইন্যান্স | ১৭,৭৫,৮১,৩৮৪ | ১২,২৭,৪৪,২৫৩ | ২০.৬৫ |
১৯ | ফাস ফাইন্যান্স | ১৪,৯০,৩৬৪ | ১২,৯৩,৯৯,১৫২ | নেগেটিভ |
২০ | ইন্টারন্যাশনাল লিজিং | ২২,১৮,১০,২৪৬ | ১২,৯৬,৭০,২৭০ | নেগেটিভ |
২১ | আইডিএলসি | ৩৯,৫৯,০৩,৩১৯ | ১৭,১৫,৮৪,৪৯৮ | ১২.৪৪ |
২২ | পিএলএফএসএল | ২৮,৫৪,৪০,৫৯৭ | ২১,৯১,৮৯,৮৩৪ | নেগেটিভ |
২৩ | লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স | ৫৩,৮৮,৩৮,৬২৩ | ৩৫,৮০,০৪,৩৮১ | ২০.৩৩ |
সূত্র: লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স ও ডিএসই