1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে ‘বিশেষ শর্তে’
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৭ এএম

কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে ‘বিশেষ শর্তে’

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১
KPCL-plant

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি খুলনা পাওয়ার লিমিটেড বা কেপিসিএলের মেয়াদ শেষ হতে চলা দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আরও কয়েক বছর চালু রাখার সুযোগ দেয়া হতে পারে।

তবে বাড়তি মেয়াদে তারা কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ, অর্থাৎ বিদ্যুৎ কেনা না হলে সরকার কেন্দ্র বসিয়ে রেখে যে অর্থ দেয়, সেটি দেবে না।

কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল তিনটি। এর মধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে কেন্দ্র আছে দুটি। খুলনায় স্থাপিত ৪০ ও ১১৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা যথাক্রমে ৩১ ও ২৮ মে। এই দুটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে কোম্পানির থাকবে কেবল একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎকেন্দ্রের অংশীদারত্ব।

তবে মেয়াদ শেষ হতে চলা কেন্দ্র দুটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে কোম্পানিটি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও তবে এই বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য দেয়া হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানিয়েছেন, ‘কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে “নো ইলেকট্রিসিটি নো পে” ভিত্তিতে রাখার অনুমোদন দেয়া হতে পারে।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রামপাল বা রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না হওয়া পর্যন্ত খুলনা এলাকায় কিছু বিদ্যুৎ সংকট আছে। এই অবস্থায় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রয়োজন হলে সরকার বিদ্যুৎ কিনবে।

খুলনার রূপসায় ৮০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খুলনার খালিশপুরে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউজপ্রিন্ট কারখানার জমিতে এটি স্থাপন হবে। এ প্রকল্পে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার হবে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে থাকছে ডিজেল (এইচএসডি)।

২০১৮ সালের জুনে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের সময় ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কেন্দ্রটি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এর কাজ শেষ হয়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে।

অন্যদিকে বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী আগস্টে আর দ্বিতীয় ইউনিট আরও ছয় মাস পর আসার কথা। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানি নিয়ে অনিশ্চতয়ার মধ্যে শেয়ারধারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো তথ্যই জানানো হচ্ছে না।

মার্চের শেষে বিষয়টি নিয়ে কেপিসিএলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই বৈঠক নিয়েও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

পরে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির একজন কমিশনার জানান, তারা বিদ্যুৎ বিভাগকে কেপিসিএলের কেন্দ্র দুটির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। তবে কেপিসিএল কিছু জানায়নি।

যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বলা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে বিএসইসির কাছে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।’

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। নতুন করে কুইক রেন্টাল অনুমোদন দেয়ার পক্ষে আমিও না। তবে যেসব কুইক রেন্টাল অনুমোদন দেয়া হয়েছে তারা আরও ২০ বছর পরিচালনা করতে পারবে। সে সুযোগ তাদের দেয়া উচিত।’

এ বিষয়ে জানতে কেপিসিএলের কোম্পানি সচিব আরিফুল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

পরে কেপিসিএলের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা সোহরাব আলী খান বলেন, ‘আমরা আবেদন করেছি এবং চেষ্টা তদবিরও চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি নবায়ন হবে।’

‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ ভিত্তিতে অনুমোদনের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের ওই কর্মকর্তা যা বলেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাব খান বলেন, ‘না, এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’

লেনদেনে গতি
গত ৭ এপ্রিল বিএসইসি কেপিসিএলের ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারদরের প্রান্তসীমা বাতিল করে। এর আগে কোম্পানি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এর লেনদেন হতো না বললেই চলে। তবে ফ্লোর প্রাইস বাতিল হওয়ার পর টানা ১৪ কার্যদিবস দাম কমলেও লেনদেন গতি পায়।

তবে ১৫তম দিনে ২৯ এপ্রিল পাল্টে যায় চিত্র। সেদিন কেবল ১০ শতাংশ দাম বাড়েনি, হাতবদলও হয় ৩৯ লাখ ১৪ হাজার ২৭৫টি শেয়ার। পরের দিনও দাম বাড়ে প্রায় ১০ শতাংশ। দাম হয় ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা। সেদিনও হাতবদল হয় ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২৯৪টি শেয়ার।

আবার টানা পাঁচ কার্যদিবস দাম কমে ৩৫ টাকায় নেমে আসে। আর সেদিন লেনদেন হয় ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ২০২টি শেয়ার। এরপর আরও তিন কার্যদিবস বেড়ে দাম দাঁড়ায় ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর দুই দিন কমলেও একদিনে প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে টাকা ৩০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৩৬ রাখ ১০ হাজার ৩০৩টি।

আর্থিক অবস্থা
জুন অর্থবছরের কোম্পানিটি ইতোমধ্যে তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। এই ঘোষণা অনুযায়ী অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৮৫ পয়সা। ফলে এই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ১৯ পয়সা বা ২৮ শতাংশ।

আর অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয় দাঁড়িয়েছে এক টাকা ৫৭ পয়সা।

কেপিসিএলের কেন্দ্রগুলোর কী অবস্থা
কোম্পানিটির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এর মধ্যে একটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ায় আর নবায়ন করা হয়নি।

বাকি দুটির মধ্যে খানজাহান আলী পাওয়ার লিমিটেডের ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ মে। আর খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট টু ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ মে।

কোম্পানিটির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এর মধ্যে একটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ায় আর নবায়ন করা হয়নি।

বাকি দুটির মধ্যে খানজাহান আলী পাওয়ার লিমিটেডের ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ মে। আর খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট টু ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ মে।

কোনো কোম্পানি অবসায়ন হলে সেই কোম্পানির শেয়ার বাই ব্যাক করার কোনো আইন বাংলাদেশে নেই। এই অবস্থায় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে উৎকণ্ঠিত অনেক মানুষ।

মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কেপিসিএলের হাতে থাকবে কেবল সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার প্লান্ট। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে এটি।

পটুয়াখালী জেলার খলিসাখালী এলাকায় ১৫ বছর মেয়াদি ১৫০ মেঘাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে খুলনা পাওয়ারের।

লভ্যাংশের ইতিহাস
তালিকাভুক্তির বছরে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।

এরপর ২০১০ সালের জন্য ২০ শতাংশ, ২০১১ সালের জন্য ২৫ শতাংশ, ২০১২ সালের জন্য ১২.৫ শতাংশ, ২০১৩ সালের জন্য ৫ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের জন্য আবার ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।

১৯৪ টাকা ভিত্তি ধরে ১০ বছরের বোনাস শেয়ার হিসাব করলে দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৫৫ পয়সা।

পাঁচ বছর ধরে নগদ লভ্যাংশের দিকে জোর দেন কোম্পানির উদ্যোক্তারা। ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ (শেয়ারপ্রতি সাড়ে সাত টাকা), ২০১৭ সালে ৫৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ এবং ২০২০ সাল ৩৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।

শেয়ারের মালিকানার তথ্য
২০১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ১৯৪ টাকা করে। ছয় বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার।

চলতি বছরের জানুয়ারি ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা ১ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীরা। যার পুরোটা কিনেছে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা।

তবে গত এক মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছেন বেশি, আর কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

৩০ এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী এখন কোম্পানির ৯.২ শতাংশ মালিকানা আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২০.৫১ শতাংশ।

এক মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করেছেন ০.৮৪ শতাংশ, যার পুরোটাই কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

ফলে বর্তমানে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার ৪৪৩টি শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। যদি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর নবায়ন না হয়, তাহলে এরা সবাই অনিশ্চয়তায় পড়বেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ