দেশের ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট গভর্নেন্সের অভাব রয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ম্যানেজমেন্ট টিম, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এবং রেগুলেটরি অথরিটির মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবে বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণ। এই সমস্যার সমাধানে সুশাসন এবং জবাবদিহিতার কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদী আমানত গ্রহণ করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকা এবং পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানা অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে সবার আগে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত।
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, লক্ষ্য করা যায় যেসব ব্যাংকে কর্পোরেট গভর্নেন্স ভালো তাদের খেলাপি কম এবং যাদের কর্পোরেট গভর্নেন্স খারাপ তাদের খেলাপি অনেক বেশি। এছাড়া একটি ব্যাংকে পরপর তিনটি কোম্পানি অডিট করার পরেও কোন দুর্বলতা খুঁজে পায় না। অপরদিকে দিনদিন খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। এ কারণে মন্দ ঋণ কমাতে হলে পর্ষদ সভা ইন্টার্নাল ক্রেডিট রেটিং বিভাগ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সহ সবার সামষ্টিক প্রচেষ্টা দরকার।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আশি ও নব্বইয়ের দশকে হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি এবং গ্রাহকের সংখ্যা কম। একই গ্রাহকের উপর একাধিক ব্যাংক নির্ভরশীল। খেলাপি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এটি। এছাড়া বর্তমানে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এদেরকে দমন করতে হলে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি। আমাদের দেশে খেলাপি কামাতে যেসব আইন রয়েছে সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটাও দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একাধিক পরিদর্শন বিভাগ আছে, তারপরেও কি কারণে খেলাপি বাড়ছে এটাই এখন মূল প্রশ্ন। আপনারা জানেন সম্প্রতি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হয়েছে। এর মূল কারণ ছিল অনিয়ম এবং দুর্নীতি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং সিস্টেমের দুর্বলতাকেই এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ব্যাংকের চেয়ে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।
শেয়ারবার্তা / হামিদ