বর্তমানে বাজারে প্রায় ৩৫৭টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। ২০১৭ সালের বাজারে দুই থেকে তিন শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে ছিল। ২০১০ সালে বাজারধসের পর ২০১৬, ২০১৭ সালের চেয়ে এখন বাজার খারাপ অবস্থানে রয়েছে। শেয়ারদর কমতে কমতে এমন ফেসভ্যালুর নিচে বা কাছাকাছি এলেও বিনিয়োগকারীরা এত কম দরে শেয়ার কেনারও ভরসা পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা এবং দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের তুলনায় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী বেশি। অর্থাৎ ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ৯০ শতাংশ আরও ১০ শতাংশ মাত্র প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। ১০ শতাংশ বিনিয়োগকারী বাজার ভালো করতে চাইলেও তারা ততটা প্রভাবিত করতে পারেন না। আবার এ ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা সবসময় শেয়ার বুঝে-শুনে কেনেন-এটা বলা যাবে না। কারণ তারা অনেক সময় বুঝতে পারেন না কোন শেয়ার কখন কিনতে হবে। দেখা যায় যখন একটি শেয়ারদর দুই বা তিন দিন ধরে বাড়ছে, তারা মনে করেন এটি আরও বাড়বে, তখন ওই শেয়ারের প্রতি ঝোক বেশি দেখা যায়। এতে ওই বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে কোনো শেয়ারদর ক্রমাগত কমছে বা শেয়ারদর অবমূল্যায়িত হচ্ছে। তখন বিনিয়োগকারী ভয়ে ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন। আসলে বাজার এখন ভীতির মধ্যে রয়েছে। তাই বাজার গতিশীল করতে হলে বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বাড়াতে হবে। পুঁজিবাজারে মোট ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। গত দুই থেকে তিন বছরে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে অব্যবস্থানা, সুশাসন এবং খেলাপি ঋণ নিয়ে। সে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর এখন সবচেয়ে কম। বাজার ভালো করতে হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। তার সঙ্গে সুশাসন ও খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমাতে হবে। একটি পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। যেটা বিশ্বের সব পুঁজিবাজারে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা সেভাবে গড়ে ওঠেনি।
জাকির হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতির জিডিপি গ্রোথ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এ গ্রোথ অনুযায়ী পুঁজিবাজার গতিশীল হচ্ছে না। বরং বিপরীতমুখী চলছে। পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে। তবে বিএসইসির সুশাসন নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আসলে বিএসইসিই যে শতভাগ সুশাসন নিশ্চিত করবেÑতা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আরও যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে সেগুলোকেও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ডিএসই, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে একটি সুসম্পর্ক ও সুশাসন থাকা দরকার। এছাড়া যারা বাজারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বিশেষ করে ব্রোকারেজ হাউজ, ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ইস্যু ম্যানেজারসহ সব পর্যায়ে সুশাসন দরকার। শুধু বিএসইসির সুশাসন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করলেই হবে না। বাজারে প্রায় ৩৫৭টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে রয়েছে। যদি ২০১৭ সালের বাজারের কথা চিন্তা করেন তখন দুই থেকে তিন শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে ছিল। ২০১০ সালে বাজারধসের পর ২০১৬, ২০১৭ সালের চেয়ে এখন বাজার খারাপ অবস্থানে রয়েছে। শেয়ারদর কমতে কমতে এমন জায়গায় এসেছে যে এত কম দরেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে ভরসা পাচ্ছেন না।
শেয়ারবার্তা / মিলন