পুঁজিবাজারের জন্য বড় সুখবর আসছে। পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। বদলাতে পারে এক্সপোজারের (Exposure to Capital Market) সংজ্ঞা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
আজ সোমবার (১৫ মার্চ) অনুষ্ঠিত বিএসইসি ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বিএসইসির কমিশন প্রফেসর ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এতে উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে ব্যাংকের এক্সপোজার শেয়ারের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে গণনা করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে, বাজারে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলে ব্যাংকের বিনিয়োগও বেড়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এর ফলে ব্যাংকের পক্ষে নতুন বিনিয়োগ করা তথা বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ কমে আসে। এমনকি কখনো কখনো ব্যাংকের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ সমন্বয় তথা সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হয়। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায় বলে মাঝে মধ্যেই বাজার অস্থির হয়ে উঠে।
ধরা যাক, এবিসি ব্যাংক পুঁজিবাজারে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনেছে। আইন অনুসারে, ব্যাংকটির ২ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। অর্থাৎ আরও ১ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আছে ব্যাংকটির। কিন্তু বাজারে ব্যাংকটির কেনা শেয়ারের দাম বেড়ে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়ে গেছে। বিদ্যমান সংজ্ঞার কারণে ব্যাংকটি ওই ১ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। মাত্র ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। যদি ১ কোটি টাকায় কেনা শেয়ারের মূল্য ২ কোটি ২০ লাখ হয়ে যায়, তাহলে ব্যাংকটি নতুন কোনো বিনিয়োগ তো করতে পারবে-ই না, উল্টো ২০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগের পরিমাণ কথিত সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এক্সপোজার গণনার ক্ষেত্রে যদি বাজারমূল্য বিবেচনায় না নিয়ে ক্রয় মূল্য বা প্রকৃত বিনিয়োগের অংক বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ব্যাহত হবার আশংকা থাকে না। বাজারের উপরেও কোনো চাপ পড়ে না।
এই বাস্তবতায় দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা শেয়ারের বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যে ব্যাংকের এক্সপোজার গণনার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে তেমন সাড়া দেয়নি। আজকের বৈঠকে ওই অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এক্সপোজার গণনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মত হয়েছে বলে বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুসারে বোনাস দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া, বিশেষ মিউচ্যুয়াল ফান্ডে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশেষ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের (এসপিএফ) তফসিলি ব্যাংকগুলোর দু’শ কোটি টাকা বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত সার্কলারে কিছুটা পরিবর্তন এনে এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সম্পদভিত্তিক বিধিমালা), ২০০৪ এর যুগোপযোগীর মাধ্যমে এসপিডির তহবিল সম্পদভিত্তিক সিকিউরিটিজ এ বিনিয়োগের পাশাপাশি অন্যান্য ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ যেমন: সুকুক, করপোরেট বন্ড, গ্রিন বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করা হয়েছে।