করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবায় আগ্রহ বাড়ছে। গেল বছরের মার্চে সারাদেশে যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতায় ব্যাংকমুখো হতে পারেননি গ্রাহক।
গ্রাহকরা স্বশরীরে ব্যাংকে যেতে না পারলেও সেবা গ্রহণে ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেছেন। এর প্রভাবে আগের বছরের চেয়ে গত বছর কার্ডে লেনদেন অনেক বেড়েছে।
কার্ড ব্যবহারের চেয়ে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় লেনদেন সেরেছেন গ্রাহকরা। যার প্রভাব গেল বছরের ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন ২০১৯ সালের তুলনায় ব্যাপক হারে বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ‘মান্থলী ইকোনোমিক ট্রেন্ডস’ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং এর বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকাররা জানান, করোনাভাইরাসের আগে থেকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং এ অভ্যস্ত ছিল গ্রাহকরা। তবে করোনায় সেই অভ্যাসকে আরও গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রাহকের এই অভ্যাস ধরে রাখতে ব্যাংকগুলো তাদের ডিজিটাল লেনদেন মাধ্যমগুলো আরো শক্তিশালী এবং এই ধরনের সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের প্রধান কারিগরী কর্মকর্তা বলেন, করোনায় ডিজিটাল ব্যাংকিং এর আগ্রহ বাড়ছে তাই আরো কিছু ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে হবে। অনেক ব্যাংক কাজও শুরু করছে।
ব্যাংকগুলো এ খাতে গ্রাহক সন্তুষ্টি ধরে রাখতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বোর্ডগুলোও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি। ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট গ্রাহকের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর গ্রাহক সংখ্যা নগন্য। তাদের সাবক্রিপশন বাড়াতে হবে।
গেল বছর করোনার প্রভাবে নতুন গ্রাহক বেড়েছে ঠিকই, তবে আগের গ্রাহকরাই লেনদেন বেশি করেছেন বলে তিনি মনে করেন। ডিজিটাল ব্যাংকিং এর অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো এখন ই-কেওয়াইসি (ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ইলেট্রনিক ফর্ম) চালু করেছে। এর সাহায্যে গ্রাহক ব্যাংকে না এসে একাউন্ট খোলা যাচ্ছে।
ব্যাংকিংখাতের অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের সুবিধা বাড়ালেও কার্ড বা চেকবইসহ অন্যান্য কাজে গ্রাহককে ব্যাংকে আসতেই হচ্ছে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন এসব কাজেও গ্রাহককে ব্যাংকে আসতে না হয়।
ব্যাংকের ডিজিটালাইসড হওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাংকিং সংক্রান্ত গ্রাহকদের যে কোন ধরনের সমস্যা বা জিজ্ঞাসার কথা জানাতে ব্যাংকগুলো আর্টিফিসিয়াল ইনিটিলিজেন্স এর ব্যবহার শুরু করেছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলো যেভাবে ডিজিটাল ট্রান্সফর্ম করছে তাতে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে অর্ধেক গ্রাহক কোন কোন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা নিবেন।
মোবাইল ব্যাংকিং: গেল বছর ডিজিটাল ব্যাংকিং এ সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। ২০১৯ সালের তুলনায় গেল বছর এই মাধ্যম ব্যবহার করে লেনদেন বেড়েছে ২৯ শতাংশ। বৃদ্ধির এই ধারা চলতি বছরেও অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ডাটা থেকে এ চিত্র দেখা যায়।