পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকারি-বেসরকারি খাতের ২৫ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি পুঁজিবাজারে এই ২৫টি ব্যাংকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,০৩৩ কোটি টাকা।
বিএসইসির এক কর্মকর্তা জানান, যদিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ২৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো সেই অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করেনি। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো ১,০৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এরমধ্যে নতুন করে তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
মুলত পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধায় এ তহবিল গঠনের নির্দেশনা দেয়। সে নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় গত বছর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর ব্যাংকগুলোর এ তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনকারী হিসেবে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অনেক। পুঁজিবাজার অস্বাভাবিক উত্থান-পতন ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে। দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমান অবস্থায় পরিস্থিতি উন্নয়নে পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারীদের তারল্য সহায়তা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
সার্বিক বিবেচনায় তারল্যপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউসকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কাটাতে বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বলা হয়, এখন থেকে যেকোনো ব্যাংক তার নির্ধারিত সীমার বাইরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার
বিশেষ তহবিল’ গঠন করতে পারবে। অর্থাৎ, একটি ব্যাংক তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।
আর এই ২০০ কোটি টাকা ওই ২৫ শতাংশের আওতামুক্ত থাকবে। ব্যাংকগুলো চাইলে তাদের নিজস্ব উৎস থেকে তহবিল গঠন করতে পারবে। আবার তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণও নিতে পারবে। পাঁচ বছরমেয়াদি এ তহবিলের সুদ হার নির্ধারিত ছিল পাঁচ শতাংশ। তবে পরে বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুদ হার দশমিক ২৫ শতাংশ কমানো হয়। বর্তমানে এ তহবিলের সুদহার ৪.৭৫ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি যে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাতে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা উল্লেখ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে এখন অনেক অলস অর্থ রয়েছে। করোনার কারণে দেশে নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগও কমে গেছে। এদিকে, পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের সুযোগও ফিরছে। সব দিক বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোও ধীরে ধীরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।