ব্যাংকগুলো ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঘোষিত রিবেট সুবিধা না দেওয়ার ফন্দিফিকির করছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল, গত এক বছরে যেসব গ্রাহক নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেছেন তারা সুদের ওপর ১০ শতাংশ রিবেট-সুবিধা পাবেন। কষ্ট করে মেয়াদি ঋণগ্রহীতাদের যারা কিস্তি পরিশোধ করেছেন তাদের জন্য সামান্য এই প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সিঙ্গেল ডিজিটের মতোই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই তা বাস্তবায়ন করছে না। বরং কৌশলে গ্রাহকদের এই সুবিধা দিতে অসদুপায়ও অবলম্বন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজেদের কম্পিউটার সিস্টেমে ‘হস্তক্ষেপ’ করে গ্রাহকদের হিসাবে এক থেকে দুই দিন টাকা শোধে বিলম্ব দেখাচ্ছে। এক দিনে সুদ কাটলেও আরেক দিন আসল অঙ্ক পরিশোধ দেখিয়ে দু-চার টাকা পেনাল্টি দেখাচ্ছে। এভাবে বছরে একবার পেনাল্টি দেখালে আর রিবেট দিতে হবে না। অতিসম্প্রতি প্রায় সবগুলো বেসরকারি ব্যাংকই তাদের আইটি সিস্টেমে পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলেছে, এক পয়সাও যদি জরিমানা দেখানো যায়, তাহলে ঐ গ্রাহক আর ভালো গ্রহীতা থাকছেন না। ফলে, ব্যাংক ১০ শতাংশ রিবেট না দেওয়ার সুযোগ নিতে পারবে। সূত্র জানায়, শোনা গেছে কোনো কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে তাদের আইটি শাখাকে এ কাজে লাগিয়েছে। সেই সুযোগে কোনো কোনো ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও মুছে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলাই চলছে। পরিচালকদের বেনামি ঋণ থেকে শুরু করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের পক্ষে ব্যাংকের অবস্থান নীতি-নৈতিকতাকেও হার মানিয়েছে। অথচ সত্ ও প্রকৃত উদ্যোক্তাদের ওপর খড়্গহস্ত হচ্ছে ব্যাংক। যারা জ্বালানি সংকটসহ অন্যান্য কারণে সমস্যাগ্রস্ত হয়েছিল। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদেরও এখন ব্যাংকিং সেবায় নাভিশ্বাস উঠেছে।
ভোক্তা ঋণ এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণসহ ছোটো অঙ্কের ঋণ গ্রহীতাদের ওপর চড়াও হওয়া ব্যাংকগুলো সেই ‘কাবুলিওয়ালা’দের মতোই আচরণ করছে বলে একাধিক সূত্র মত প্রকাশ করেছে। সার্ভিস চার্জও এত বেশি যে, দুই পাতার একটি স্টেটমেন্ট প্রিন্ট নিতে হলেও ২৫০ টাকা প্রদান করতে হয়। নানা ছলছুতোয় গ্রাহকের টাকা কেটে নেওয়াই যেন ব্যাংকের কাজ। সেবার মানসিকতা আর নেই। ফলে অযৌক্তিক চার্জ আরোপ করেও তারা ক্ষান্ত হচ্ছে না। বরং একেক ব্যাংক একেক রকম চার্জ আরোপ করছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১৩ মাসে বছর ধরে আমানত সংগ্রহ করছে।
ইত্যকার নানাবিধ অভিযোগের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রটি বলেছে, লাগামহীন ব্যাংকিং খাতকে এখনই লাগাম টানতে না পারলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যাংকের আমানত সংগ্রহেও বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে। এই সুযোগে সঞ্চয়ের নামধারী প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পুঁজি চলে যাবে। অতীতের মতো এ ধরনের কোম্পানির কাছে টাকা জমা রেখে সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা, ব্যাংকগুলোতে এখন টাকা রাখলেও টাকার অঙ্কভেদে সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা হয়। একসময় সঞ্চয়ী হিসাবে এই চার্জ ছিল না। উপরন্তু, আবগারি শুল্কও পরিশোধ করতে হচ্ছে। নানা চার্জে কাটাকাটির পর মোট কর্তনকৃত টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে রাখা হচ্ছে। ফলে, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী, ভোক্তা ঋণগ্রহীতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এখন দিশাহারা।
শেয়ারবার্তা / মিলন