পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবিসি) শেয়ারপ্রতি ৬০ টাকা চুড়ান্ত নগদের পাশাপাশি একটির বিপরীতে দুটি করে বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বোনাস শেয়ার বিও হিসাবে যুক্ত হওয়ার পর সর্বনিম্ন কত টাকায় বিক্রি হবে এই শেয়ার। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করা হয় ফ্লোর প্রাইস। তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই এই দাম বেঁধে দেয়া আছে। বলা হয়েছে, এর নিচে কোনো অবস্থাতেই শেয়ারের দাম যাবে না।
ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির মৌল ভিত্তি বিবেচনায় না নিয়ে বাজার মূল্যকেই বিবেচনা করা হয়। গত ২২ মার্চের আগের পাঁচ দিনের গড় মূল্য ফ্লোর প্রাইস হিসেবে ধরা হয়। ফ্লোর প্রাইস নির্দিষ্ট হওয়ার পর যেসব কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে লভ্যাংশ সমন্বয়ের পর ফ্লোর প্রাইস নতুন করে ঠিক করা হয়নি।
গত ২২ মার্চ মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজের ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা হয় ৭৯৪ টাকা। এরপর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। কোনো কোম্পানির দর রেকর্ড ডেটে যে টাকায় থাকে, তার পরে যত শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়, তত পরিমাণ কমে। স্বাভাবিক নিয়মে কোম্পানিটির সমন্বয় করা দাম হওয়ার কথা ছিল ৭২০ টাকা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস এখনও আগের দরেই আছে।
মুন্নুর মতো ঘটনা ঘটেছে প্রগতি লাইফ ও প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সের ক্ষেত্রে। কোম্পানি দুটি শেয়ারহোল্ডারদেরে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ায় ফ্লোর প্রাইস নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কোম্পানি দুটির শেয়ার রেকর্ড ডেটের পর থেকে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে রয়েছে। প্রায় বছর গড়িয়ে গেলেও এখনো ফ্লোর প্রাইস অ্যাডজাস্ট হয়নি।
মুন্নু, প্রগতি লাইফ ও প্রোগ্রেসিভ লাইফের ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয়নি। কিন্তু বিএটিবিসি একটির বিপরীতে দুটি করে শেয়ার দেবে। এখন ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় না হলে এমনিতেই এর শেয়ারধারীরা বিপুল পরিমাণ মুনাফা পাবেন। লভ্যাংশ ঘোষণার জেরে বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার দর ১৯২ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা আছে ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সা। যদি এর নিচে এই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হতে না পারে, তাহলে শেয়ারধারীরা বিপুল মুনাফা পাবেন। কারণ, এখন ১ হাজার ৭০০ টাকার শেয়ারধারীরা তখন তিনটি শেয়ারে পাবেন দুই হাজার ৭২২ টাকা ৬০ পয়সা। ফ্লোর প্রাইস না থাকলে রেকর্ড ডেটে যদি বৃহস্পতিবারের দাম থাকে, তাহলে এর সমন্বিত দাম থাকত ৫৬৬ টাকা ৭০ পয়সা। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ৩ মার্চ। সেদিন যাদের হাতে শেয়ার থাকবে, তারাই বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ পাবেন।
বিএটিবিসির বিনিয়োগকারীরা কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুনাফা হিসেবে পেয়ে যাবেন- জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোকে ক্রমাগত পতন থেকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তন হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি লভ্যাংশ ঘোষণার পর সমন্বয় করা দর যদি ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে কম হয় তাহলে তা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর বেশি হলে আগের যা আছে তাই থাকবে।’
বিএটিবিসি ১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এরপর সর্বপ্রথম ১৯৮৫ সালে চারটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার বোনাস ঘোষণা করে। তারপর ১৯৮৭ সালে দুটি শেয়ারের বিপরীতে একটি, ১৯৯৩ সালে তিনটি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার ঘোষণা করা হয়। এর ২৫ বছর পর ২০১৮ সালেও কোম্পানিটি ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
এর আগ পর্যন্ত কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৬০ কোটি টাকা। লভ্যাংশ ঘোষণার পর মূলধন দাঁড়ায় ১৮০ কোটি টাকা। আবার ২০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ অনুমোদন হলে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি টাকা।
কোম্পানির মোট শেয়ারের ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। সরকারের কাছে আছে দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকরীদের কাছে আছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বিদেশিদের কাছে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার।