সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মো. মোশাররফ হোসাইন, এফসিএ। তিনি বলেন, বীমা খাত নিয়ে হতাশার দিক থাকলেও এই খাত ভিতরে ভিতরে অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) বাণিজ্য প্রতিদিন আয়োজিত বীমা খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বীমা খাতকে একটা উল্লেখযোগ্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বীমা খাতকে একটা বিশ্বাসযোগ্য স্থানে দাঁড় করাতে চাই যেন বীমা খাতের উপর মানুষের আস্থা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, বীমা খাত সবসময় মানুষের কল্যাণের কথা ভাবে। মানুষ যেন ভালো থাকে এটাই বীমা খাতের চাওয়া। দেশের সব মানুষ বীমার আওতাভুক্ত হলে এই খাত যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি মানুষও এর দ্বারা উপকৃত হবে।
ড. মোশাররফ হোসাইন বলেন, এখন কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়- আপনি কোথায় চাকরি করতে চান। তাহেল উত্তর আসবে- ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। তবে একটা সময় আসবে যখন চাকরির বাজারে বীমা হবে এক নম্বর। আমরা এ লক্ষ্যে বীমা খাতের সিরিজ রিফর্ম করছি।
এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বিমা খাতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বিমা খাতের অবদান মাত্র ০.৫৭ শতাংশ। ভারতের অর্থনীতিতে তাদের বিমা খাতের অবদান ৩.৬৯, এমনকি ইন্দোনেশিয়াতে বিমা খাতের অবদান ২.৩৬।
ড. মো: মোশাররফ হোসাইন আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি টেকসই অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা বিমা খাত সমান্তরালে হাঁটতে পারিনি। তবে আমাদের অর্থনীতি সম্ভাবনাময়। আমরা যোগ্যতার সাথে এগিয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের এমডি মোঃ জালালুল আজিম।
মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক বিমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বিমা শিল্প খুবই নগণ্য। এখানে মাথাপিছু বিমা ব্যয় মাত্র ৯ ডলার। জিডিপির অনুপাতে বিমা প্রিমিয়ামের পরিমাণ প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জিডিপির তুলনায় বিমা প্রিমিয়াম প্রায় ৪ শতাংশ। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় ১.২৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২.২৫ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ায় ২ শতাংশ, এবং ফিলিপিনে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তিনি বলেন, বিমা খাতের বড় সমস্যা আস্থার সংকট। এই আস্থার সংকট দূর করতে দ্রুত সঠিক নিয়মে গ্রাহকদের বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংক-ইন্স্যুরেন্স (ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিমা পণ্য বিক্রি) চালু করতে হবে।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্তকর্তা (সিইও) মো. জালালুল আজিম বলেন, উন্নত দেশে বিমা বাধ্যতামূলক। বিমা ছাড়া ছেলে-মেয়ে স্কুলে ভর্তি করা যায় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে বিমার প্রয়োজন হয় না। বিমা খাতের উন্নয়নে আমাদের সামনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এ খাতের ইমেজ সংকট দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. কাজিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার এস এম ইব্রাহিম হোসাইন প্যানেল আলোচক হিসাবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক একেএম রাশেদ শাহরিয়ার।