পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানিই দুর্বল। শতাংশের হিসাব করলে তা ৯৫ শতাংশ হবে। কিন্তু এখানে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মৌলভিত্তির কোম্পানি থাকা জরুরি। সোমবার এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে আলোচকদের আলোচনায় এমন তথ্য ওঠে আসে।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন এবং বালি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক আরিফুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন বলেন, একটি বাজারের স্বচ্ছতা থাকতে হলে ন্যূনতম আইপিও ৫০ শতাংশ ভালো হতে হবে। গত ৯ বছরেও ৫০ শতাংশ ভালো কোম্পানি আসেনি। যদি সেটি আসত, তাহলে বাজারের একটি গতিশীলতা থাকত। কিন্তু ৯৫ শতাংশ কোম্পানিই খারাপ। কারণ ওইসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সময় যে ইপিএস ছিল তা এখন দেখা যাচ্ছে না। কেন এ রকম হচ্ছে। নিশ্চিয়ই এসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ভুলভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে বিএসইসি ও ডিএসই দায় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার তার একটি নিজস্ব শক্তি রয়েছে। বাজারকে সে শক্তি অনুসারে চলতে দেওয়া উচিত। কিন্তু সেটা বাজারে দেখা যাচ্ছে না। পুঁজিবাজারের সেই শক্তি নষ্ট করে ফেলেছে। তাই এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে-বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হচ্ছে বিএসইসি। বর্তমানে যারা বিএসইসির দায়িত্ব রয়েছেন গত ৯ বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে দেখা যাবে তাদের পারফরম্যান্স অন্তঃসারশূন্য। এতে ধরা নেওয়া যায়, তাদের দায়িত্ব পালনে গলদ রয়েছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীর বাজার নিয়ে অনাস্থা, আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বাজার ভালো করতে হলে বিএসইসির নেতৃত্বকে সুন্দরভাবে সাজাতে হবে। বাজারের মূল জায়গা ঠিক হলে, বাকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমনতিই ঠিক হয়ে যাবে। এখানে বিশেষ করে গুণসম্মত যোগ্য, সততা এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্বে বসাতে হবে। অর্থাৎ এ তিনটি গুণাগুণ যে ব্যক্তির মধ্যে থাকবে, এমনিতেই বাজার ভালো হয়ে যাবে। কারণ মানবিকতা থাকলে দেশপ্রেম এমনিতেই চলে আসে। সেক্ষেত্রে বাজারের চালিকাশক্তিগুলো রয়েছে, সহজেই তা ঠিক করতে পারবেন।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে আরিফুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসে যে সূচক ছিল, আর এখন ৯ বছর পর একই সূচকে রয়েছে। এ ৯ বছরে প্রায় ১০০ কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এর ফলে সূচকে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এতে বোঝা যাচ্ছেÑবাজারে কোনো উন্নতি হচ্ছে না এটাই বাস্তব সত্য। কিন্তু যদিও বাজারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, বাজার এখনও ভালো অবস্থানে রয়েছে। আসলে এ ভালো, সেই ভালো নয়। যে ভালোতে বিনিয়োগকারীরা কোনো লাভবান হচ্ছেন না। সেখানে এ ভালোর সাফাই গাওয়া মোটেই উচিত নয় বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, এখন বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থার অভাব রয়েছে। যদি বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে আসে, তবে বাজার ভালো হবে। কিন্তু তাহলে বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরি করবে কে? সেটাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা অর্থাৎ এ অবস্থা থেকে বাজারকে স্থিতিশীলতা আনা না যায় সেক্ষেত্রে বাজারের জন্য খারাপ অবস্থা অপেক্ষা করছে।
শেয়ারবার্তা / ২০ নভেম্বর ২০১৯