দেশের তৈরি পোশাকশিল্প অনিশ্চয়তা ও শঙ্কায় বিপর্যস্ত বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক। এক খোলা চিঠিতে তিনি বলেছেন, পোশাকশিল্প বর্তমানে সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের দেউলিয়া হয়ে পড়া, ক্রয় আদেশ বাতিল, শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন বিধিনিষেধের ফলে এ খাত অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে কোনোভাবে টিকে রয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে পোশাকশিল্পের প্রকৃত অবস্থা বোঝাতে তিনি সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে এ খোলা চিঠি লিখেছেন। তিনি বলেন, শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সব সহযোগিতা পাচ্ছে- এমন একটি ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন, যার প্রকৃত পুনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ জানুয়ারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। এ নির্দেশনা এমন সময়ে দেওয়া হলো, যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা অথবা প্রণোদনা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২৪ মাস থেকে কমপক্ষে আরও এক বছর বাড়িয়ে ৩৬ মাস করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বরও রপ্তানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল রয়েছে। এ মাসে পোশাক রপ্তানি ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। আর পুরো ২০২০ সালের হিসাবে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ কমেছে। গত বছরের জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি গেছে গত ডিসেম্বরে। এ মাসে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৮ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানিতে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রুবানা হক বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের কারণে খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর প্রভাব সারাবিশ্ব দেখেছে। গত বছর ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ ‘ক্রিসমাস সেল’। এসবের প্রভাবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। যেহেতু ভ্যাকসিন প্রাপ্যতা এখনও নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই তাদের আশঙ্কা, রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ পরিস্থিতিতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন, যাতে করে বিজিএমইএ নীতিনির্ধারকদের শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হয়।