করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক লেনদেন সীমিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এর প্রভাব পরের দুই প্রান্তিকেও অব্যাহত ছিল। একই সাথে দ্বিতীয় প্রান্তিকের শুরু থেকেই অর্থাৎ ১ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনা হয়। এরই প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের মুনাফায়। পুঁজিবাজারের বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফাই আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) ব্যাংকগুলো থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর পরিশোধের পর ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার হিসাব হয়। নিট মুনাফার ওপর ভিত্তি করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে এসব ব্যাংকের মুনাফা নিয়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক আগ্রহ থাকে। অবশ্য মূল্য সংবেদনশীল বিবেচনায় শেয়ারবাজারে থাকা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগেভাগে প্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।
ব্যাংকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আর খেলাপি না হওয়া বা অশ্রেণীকৃত ভালো মানের ঋণে খাতভেদে সাধারণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয় দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত সাধারণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির বাইরে নতুন করে আরো ১ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে নিট মুনাফার ক্ষেত্রে ভীষণ চাপে পড়েছে যাচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। কারণ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে।
বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ব্যাংকিং কার্যদিবস শেষে পূবালী ব্যাংকের মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৩৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল এক হাজার ২৫ কোটি টাকা। আল-আরাফাহ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৮০০ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৯৮৭ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭২৬ কোটি টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৯০০ কোটি টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩০০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৫১২ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৪১ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭৮০ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫৫০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬১০ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৬৪০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭২৫ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫৭১ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬৫২ কোটি টাকা। ইউসিবি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭০০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৮২৭ কোটি টাকা। প্রাইম ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫৬০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়া মুনাফা করেছে ৭১০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৯৫০ কোটি টাকা। ওয়ান ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩১৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৪৩৫ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৮০০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ২৫০০ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪১৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬১৫ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭৫৩ কোটি টাকা। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক মুনাফা করেছে ৩৪০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৫৪০ কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫০০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬৭০ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংক মুনাফা করেছে ৬০০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬১০ কোটি টাকা।
তবে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংকটি ২০২০ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে এক হাজার ১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৯৪৮ কোটি টাকা।