পুঁজিবাজারে সম্প্রতি চাঙা অবস্থা বিরাজ করছে। গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে এ পরিস্থিতি। এর মধ্যে কয়েক দফা ছন্দপতন হলেও তা স্থায়ী হয়নি। ফলে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে সূচক এবং লেনদেন। আর লেনদেন বৃদ্ধির কারণে ধীরে ধীরে ব্যবসায় ফিরছে ব্রোকারেজ হাউস।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে লেনদেন তিন হাজার টাকা অতিক্রম করে। ধসের পর তা ধীরে ধীরে ৫০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসে, যা এক সময় ৩০০ কোটির ঘরে চলে যায়। এতে ধীরে ধীরে নাজুক হতে থাকে ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের ব্যবসা। কারণ হাউস মালিকদের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় থেকে পাওয়া কমিশন। যে কারণে লেনদেন কমে গেলে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয় অনেক মালিক। খরচ কমাতে হাউসও তাদের অফিস স্পেস ছোট করে ফেলে।
অবস্থা আরও খারাপ হয় করোনাভাইরাস শুরুর পর। এ সময় মূল মার্কেটে লেনদেন ৪০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। আশঙ্কাজনকহারে লেনদেন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন হাউস মালিকরা। হাউস চালাতে অন্য খাত থেকে অর্থ নিয়ে আসেন অনেক মালিক। এ পরিস্থিতিতে ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ে। পরবর্তীতে ৬৬ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। ৩১ মে লেনদেন চালু হওয়ার পর থেকে লেনদেনে বাড়তে থাকে। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবসা। বর্তমানে গড় লেনদেন হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকার বেশি। এতে হাউসগুলোর আয় বেড়েছে। লেনদেন আরও বাড়লে তাদের অবস্থা আরও ভালো হবে মন্তব্য করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যারা ব্রোকারেজ হাউস চালান, লেনদেন কমে গেলে তাদের অবস্থা খারাপ হয়। কারণ এ সময়ে তাদের আয় কমে যায়। কিন্তু আয় কমলেও খরচ কমে না। ফলে ব্যবসা চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তিনি বলেন, এখন বাজারের যে সাইজ, সে হিসাবে গড় লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিত।
একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে লেনদেন বাড়লে তা হাউস মালিকসহ সবার জন্যই ভালো। পক্ষান্তরে লেনদেন কমে গেলে হাউস মালিকদের চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে। কারণ তাদের আয় আসে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন থেকে। এখনও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। অর্থাৎ বাজার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে সার্বিকভাবে বাজার ভালো হবে। যার ফল সবাই ভোগ করবেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইতে ইতিহাসের রেকর্ড লেনদেন হয়, যার পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয় ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় বড় কিছু কিছু হাউস থেকে এ সময়ে প্রতিদিনই প্রায় ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু সেই
সময়ের ধসের পর থেকে বাজার পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। এদিকে ২০১০ সালের পর মিউচুাল ফান্ড এবং কোম্পানি মিলে
প্রায় ১০০ বেশি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু তারপর লেনদেনে নেই কোনো উন্নতি। তবে বর্তমানে সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, লেনদেন এবং বাজার মূলধন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ পুঁজিবাজারের নাজুক পরিস্থিতি হয়েছিল। এখন সে চিত্র বদলেছে। এ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদি হবে এমন প্রত্যাশা করছেন তারা।