করোনাভাইরাসের ধাক্কায় পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বাটা সু চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রথমবারের মতো লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে কোম্পানিটির লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হয়েছে।
এদিকে কিছুতেই করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না বহুজাতিক এই কোম্পানিটি।
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও আগের প্রান্তিকের ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটি বড় লোকসান করেছে। এতে চলতি বছরের ৯ মাসের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮৯ টাকার উপরে।
কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভা শেষে প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রথম আঘাত হানে গত ৮ মার্চ। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার।
ফলে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক ছিল দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়। এ সময়ে প্রায় সবধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
তাছাড়া মুসলমানদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আগে করোনার প্রকোপে ঈদকেন্দ্রীক কেনাকাটায় ভাটা পড়ে। ফলে ঈদে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সব থেকে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাটা সু কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও সেই চিত্রই উঠে আসে।
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে বড় লোকসানে পড়ার কারণ হিসেবে বাটা সু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সাধারণত ব্যবসার ২৫ শতাংশ আসে ঈদকেন্দ্রীক এবং এই সময়ে উচ্চমূল্যের পণ্য বেশি বিক্রি হয়। যা উচ্চ মুনাফা দেয়।
কিন্তু করোনার কারণে এ সুযোগ এবার হাতছাড়া হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার মাত্র ১৫ শতাংশ আয় হয়েছে।
ডিএসইকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৫৩ টাকা ৭৪ পয়সা।
৩০ মে’র পর ধীরে ধীরে কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসলেও করোনার ধকল সামলে উঠতে পারেনি বাটা সু। ফলে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩৭ টাকা ৫৫ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকের মতো তৃতীয় প্রান্তিকেও বড় লোকসান করায় ৯ মাসের হিসাবে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসানে রয়েছে প্রায় ১০০ টাকা। বাংলাদেশ চামড়ার পণ্য নিয়ে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানিটি এর আগে কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৮৯ টাকা ২৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা হয় ২৩ টাকা ৫১ পয়সা।
এ ধরনের বড় লোকসানে পড়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে সীমিত বিক্রি হওয়ায় এমন লোকসান হয়েছে।
লোকসানের খাতায় নাম লেখানোর পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ মূল্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭৫ টাকা ৪২ পয়সা, যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩৬৪ টাকা ৬৫ পয়সা।