পুঁজিবাজারে লাগাতার পতনে বড় লোকসানে রয়েছে বিনিয়োগকারীরারা। প্রতিদিনই তাদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। পুঁজি রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মার্জিন ঋণ সমন্বয় করার জন্য বিনিয়োগকারীদের চিঠি পাঠাচ্ছে। এ নিয়ে নতুন করে বিপাকে পড়ছে ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের বেশকিছু সিকিউরিটিজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের ঋণ পরিশোধে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আগের ঋণ সমন্বয় করার জন্য অনতিবিলম্বে হাউজে টাকা জমা দিতে হবে। কোনো বিনিয়োগকারীর নগদ টাকা না থাকলে পোর্টফোলিওর শেয়ার বিক্রি করতে হবে। না হলে হাউজ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী শেয়ার বিক্রি বা ফোর্সসেল করে পাওনা আদায়ে বাধ্য হবে। হাউজগুলোর এরকম চিঠি পেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ তাদের কাছে এখন নগদ টাকা নেই।
এদিকে ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। কারণ তাদের কাঁধেও ঋণ শোধের দায় রয়েছে।
একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেয়ারবার্তাকে বলেন, কিছু মার্জিনধারী বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে সীমার অতিরিক্ত মাইনাস রয়েছে। যে কারণে এসব বিনিয়োগকারীকে ঋণ সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। এটা ছাড়া হাউজগুলোর কিছু করার নেই।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ারবার্তাকে বলেন, হাউজগুলো কোনো পদক্ষেপ নিলে তা অবশ্যই নিয়ম মেনে করবে। যেটা হবে নিশ্চয় নিয়ম মেনেই হবে।
জানা যায়, বিনিয়োগকারীদের ঋণ সমন্বয়ে পাঠানো চিঠিতে ঋণের সুদ ও বিভিন্ন চার্জ পরিশোধ করার বিষয়গুলো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে পোর্টফোলিওতে ইকুইটিতে যে মাইনাস রয়েছে, তা সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর রুলস ৩-এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে যখনই ইকুইটি ক্লায়েন্টের মার্জিন অ্যাকাউন্ট ডেবিট ব্যালান্সের ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে তখন হাউজগুলো ঋণ সমন্বয়ের জন্য তাদের অবহিত করবে। যাতে কোনোভাবেই ইকুইটি মার্জিন ঋণের ১৫০ শতাংশের কম না হয়। হাউজ কর্তৃপক্ষের ক্লায়েন্টের প্রতি এ-সংক্রান্ত চিঠির তিন দিনের মধ্যে নগদ অর্থ কিংবা মার্জিনেবল সিকিউরিটিজ দিয়ে অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয় করবে। যে পর্যন্ত ইকুইটি সন্তোষজনক অবস্থায় না আসে, সে পর্যন্ত ক্লায়েন্টের লেনদেন বন্ধ থাকবে।
এদিকে মার্কেট মন্দা থাকায় নতুন করে ঋণ নেওয়া বিষয়েও সতর্ক হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের অভিমত, পুঁজিবাজার এখন যে অবস্থায় রয়েছে, এই অবস্থায় ঋণ নিলে তারা সমস্যায় পড়ে যাবেন। তখন তাদের জন্য ঋণ শোধ করা মুশকিল হয়ে পড়বে। অন্যদিকে মার্জিন ঋণে সুদের হারও বেশি, যে কারণে তারা যতটা সম্ভব মার্জিন ঋণ এড়িয়ে চলছেন।
তথ্যমতে, বর্তমানে মার্জিন ঋণের অনুপাত দশমিক ৫০। অর্থাৎ এক লাখ টাকা থাকলে ওই বিনিয়োগকারীকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তবে ঋণ প্রদানের প্রবাহ নির্ভর করছে হাউজ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপর। কোনো কোনো হাউজে ঋণের হার শূন্য দশমিক ২৫। অর্থাৎ এক লাখ টাকায় একজন বিনিয়োগকারী ২৫ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। আর এ ঋণের বিপরীতে সুদ গুনতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে ঋণের অনুপাত বিভিন্ন রকমের। যেখানে সুদ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে ১১ থেকে ১৮ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে তিন শতাংশ সার্ভিস চার্জ। অর্থাৎ যিনি ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছেন তার সুদ (সার্ভিস চার্জ) গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১৪ শতাংশ। আর যিনি ১৮ শতাংশ হারে ঋণ নিচ্ছেন তার সুদ হচ্ছে ২১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এত উচ্চমূল্যে ঋণ নিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হওয়া কষ্টকর, যে কারণে মার্জিন ঋণ থেকে দূরে সরে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিছুটা ভালো হলেও ঋণ নিয়ে খুব একটা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে বাজারের পরিস্থিতিও তেমন নয় যে, বাজার থেকে মুনাফা করে কিস্তি দেওয়া সম্ভব। তাই অনেকেই এ ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হননি। ঋণের শর্ত আরও সহজ করার দাবি জানান তারা।
শেয়ারবার্তা / হামিদ