করোনাভাইরাসের কারণে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা নতুন অর্থবছরেই (২০২০-২১) কাটিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে। মন্দা প্রভাব কাটিয়ে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিরও অল্প উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির আকার হতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে কমে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তৈরি করা এক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
গত ১১ জুন সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করা হয়। বাজেটে চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন হতে পারে এবং আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ দশমকি ২ শতাংশ।
বাজেটের আগ মুহূর্তে ৮ জুন বিশ্ব ব্যাংক এক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে দাবি করে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়াবে মাত্র ১ শতাংশে।
তবে বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদন মতে, এডিবির পূর্বাভাসের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দাবি অনেকটাই কাছাকাছি। আর বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির সম্পূর্ণ বিপরীতে রয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস।
এডিবির পূর্বাভাস প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে। করোনার কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেরও চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাস অর্থনৈতিক কার্যক্রম দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে, যা গত তিন মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস বাংলাদেশের অর্থনীতির দারুণ সাফল্য ছিল। করোনার সংক্রমণ শুরু হলে তা কমে আসে এবং আগামী অর্থবছরে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে এবং আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তা নির্ভর করছে কত দ্রুত সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তার ওপর। আর বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে ওঠা, কৃষিখাতে বিনিয়োগের আগাম উদ্যোগ, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সহজে কৃষিতে বিনিয়োগের সুবিধা, নতুন উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহযোগিতা করবে।’
মনমোহন প্রকাশ আরও বলেন, ‘এডিবি বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে এবং করোনার কারণে তাৎক্ষণিক অর্থ-সামাজিক অবস্থা ধরে রাখতে ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে জরুরি ভিত্তিতে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করেছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং অর্থনীতির পুনরোদ্ধারে নতুন অর্থবছরেও জোরালো সহযোগিতা দেবে এডিবি।’