পুঁজিবাজার টেকসই করতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে আস্থা বাড়বে কীভাবে? বাজার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন; রাষ্ট্রযন্ত্র কি সেভাবে সহযোগিতা করছে? সরকার ১০ হাত এগোলে রাষ্ট্রযন্ত্র দুই হাত পেছনে যায়। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার নির্দেশ দিয়েছেন বাজারকে ভালো করার। বিএসইসি ও ডিএসই এ কয়েক মাসে এমন কী করেছে যে, বিনিয়োগকারীরা নতুন পুঁজি নিয়ে আসবেন? বাজারের এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। আসলে নতুন বিনিয়োগ আসার কোনো সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনবিইআরের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ ও সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।
ড. সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, পুঁজিবাজার চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যখন বাজার নিম্নগতিতে থাকে, তখন অবশ্যই নতুন নতুন পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। কারণ পণ্যের সরবরাহ বাড়লে বাজারে চাহিদা বাড়বে। আবার যখন কোনো কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয় বা তালিকাচ্যুত করা হয়, এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু কোম্পানির মালিকরা বেঁচে যাচ্ছেন। আসলে বাজার-সংশ্লিষ্ট যে নিয়ম-নীতি রয়েছে, তা সম্পূর্ণ সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিপক্ষে। এখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
ফজলুল বারী বলেন, পুঁজিবাজার টেকসই করতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে হবে। আস্থা বাড়াতে হলে সুশাসন নিশ্চিত ও অর্থের প্রবাহ বাড়াতে হবে। না হলে বিনিয়োগকারীরা কেন আসবেন? কারণ বিনিয়োগকারীরা এলেই তাদের অর্থ বিভিন্নভাবে নিয়ে যান। এখন বাজার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না এবং এখানে শৃঙ্খলাও নেই। প্রধানমন্ত্রী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, তার রাষ্ট্রযন্ত্র কী সেভাবে সহযোগিতা করছে। সরকার ১০ হাত এগোলে তার রাষ্ট্রযন্ত্র দুই হাত পেছনে যায়। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার নির্দেশ দিয়েছেন বাজারকে ভালো করার জন্য। বিএসইসি ও ডিএসই এ কয়েক মাসে এমন কী করেছেন যে, বিনিয়োগকারীরা নতুন পুঁজি নিয়ে আসবেন। বাজারের এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আসলে নতুন বিনিয়োগ আসার কোনো সুযোগও দেখা যাচ্ছে না। নতুন বিনিয়োগ আসতে হলে আস্থা বাড়াতে হবে। গত ৯ বছরে বাজার কারসাজিকারীদের কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, বলা হচ্ছে তারা এক কোটি টাকা কারসাজি করেছে; কিন্তু জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা! এটা তো তার পক্ষে গেছে। এটি কোনো শাস্তি হতে পারে না। তাহলে বাজার কীভাবে ভালো হবে?
তিনি আরও বলেন, তিন লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ এবং আরও তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলা হচ্ছে। ৬৬ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করা হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, কার টাকা অবলোপন করা হয়েছে? এ টাকা তো জনগণের। আবার জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে সেই অবলোপনের টাকা পূরণ করা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না। যারা এ টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের কারও শাস্তি হচ্ছে না। আবার আইসিবি এ পর্যন্ত বাজারের জন্য কী করেছে? এখানে অনেক ভাবার বিষয় রয়েছে। বাজারে কারসাজি প্রতিনিয়তই হচ্ছে। কারসাজি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসইসি গঠন করা হয়েছে; কিন্তু সেটি না করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা বিভিন্ন হাউজে গিয়ে তাদের পছন্দমতো না হলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। এগুলো করার দায়িত্ব কিন্তু তাদের নয়। অথচ তারা নিজেদের প্রভু মনে করেন।
শেয়ারবার্তা / ১৩ নভেম্বর ২০১৯