করোনার এই দুর্যোগে আতঙ্কিত মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। গ্রীষ্মের এই দাবদাহে যখন তখন হচ্ছে ঝড়-বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই তারতম্যের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি করোনা থেকে বাঁচতে এই সময়ে তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বিরূপ আবহাওয়া এবং করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে আমাদের অস্ত্র হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। এছাড়া মাস্ক-সাবান-স্যানিটাইজার ব্যবহার তো করতেই হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিনের কোনও অসুস্থতা, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান সব কিছুই রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে দেয়। শরীরচর্চার পাশাপাশি খাবারের তালিকাতে তাই রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করে এমন খাবার রাখা জরুরি।
এই সাত খাবার আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে মজবুত আর রোগ প্রতিরোধী করে তোলে।
কমলা: কমলালেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। প্রতি ১০০ গ্রামের মধ্যে ৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে এটি প্রিয় একটি ফল। কেননা এতে রয়েছে খুবই কম ক্যালরি৷ এক গ্লাস কমলার রস প্রতিদিন সকালে পান করলেই দিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-র অভাব পূরণ হবে।
লেবু: আমরা সকলেই কম বেশি লেবু খেয়ে থাকি। সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকে এটির আচার তৈরি করেও খেয়ে থাকেন। লেবু আকারে ছোট ফল হলেও এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। লেবুর উচ্চ ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেকোন ভাইরাসজনিত ইনফেকশন যেমন- ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে খুব কার্যকারী। মূত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে। লেবুর রসে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সাহয্য করে। যাদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তারা খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।
তরমুজ: গ্রীষ্মকালে যেসব ফল আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে তরমুজ একটি উল্লেখযোগ্য ফল। এই ফল চৈত্র ও বৈশাখ মাসে খুব বেশী পাওয়া যায়। তরমুজের মন কাড়া রং আর রসাল মিষ্টি স্বাদের জন্য সবার কাছে এ ফলটি অত্যন্ত প্রিয়। গরমের সময় তরমুজ দেহমনে প্রশান্তি আনে। শুধু তাই নয়, পুষ্টিগুণে ভরা তরমুজ দেহের পুষ্টি চাহিদা দ্রুত পূরণ করে। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। যারা গরমে কাজ করে বা যাদের বেশি ঘাম হয়, তাদের নিয়মিত তরমুজ খাওয়া দরকার। এতে শরীর তাড়াতাড়ি দুর্বল হয় না। তরমুজে যে পটাশিয়াম থাকে তা মানব দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পুষ্টিবিদদের মতে তরমুজ হৃদরোগ, হাঁপানী, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শশা: শশায় রয়েছে প্রাকৃতিক ব্রেথ ফ্রেশনারের গুণ। শশার মধ্যে বিদ্যমান পলিকেমিক্যাল দুর্গন্ধ উৎদনকারী ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করবে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য শশার টুকরা মুখের মধ্যে ৩০ সেকেন্ড রেখে দিন। শশায় ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্ল্যাভেনয়েডস, ট্রিটারপেনেস, লিগনান নামের পলিফেনল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে, শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
টক দই: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত উপকারী। এটা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এতে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে। যারা দুধ খেতে পারেন না বা দুধ যাদের হজম হয় না, তারা অনায়াসেই টক দই খেতে পারেন। কারণ টক দইয়ের আমিষ দুধের চেয়ে সহজপাচ্য। ফলে স্বল্প সময়ে হজম হয়।
আম: গ্রীষ্মের অন্যতম রসালো ফল আম। এই ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। আম শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণের পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগায়। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, যা শরীরে শক্তি তৈরি করে। আমের আয়রন, আঁশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে। কাঁচা আমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকা আমে ৮ হাজার ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি।
পুদিনা: পুদিনা পাতায় প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। সাধারণ আগাছা ধরনের এই গাছটির কাণ্ড ও পাতা উপকারি। পুদিনায় রোজমেরিক অ্যাসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না। পুদিনার রস শরীরকে শীতল রাখার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।